কীভাবে চরিত্রের উন্নতি করবো : উস্তাদ নোমান আলী খান
হুমায়ুন আইয়ুব
প্রথম কথা হলো হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। মন্দ কাজ থেকে বিরত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভালো কথা বলতে যেও না। কারণ তুমি শরীরের ক্ষতস্থানে রক্ত প্রবাহিত অবস্থায় ওষুধ দিলে সেটা ফলপ্রসূ হবে না আর মন্দ কাজ বা পাপ থেকে বিরত না হয়ে ভালো কথা বললেও তা ফলপ্রসূ বা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম তোমাকে আনন্দের মধ্য দিয়ে যে বদ অভ্যাস গড়ে তুলেছ তা থেকে বিরত থাকতে হবে। অশ্লীল মুভি দেখা বাদ দিতে হবে, রাস্তায় চলমান অবস্থায় চোখকে অবণত করতে হবে- কারণ নারীর প্রতি তোমার প্রত্যেকটা চাহনির সাথে তোমার মানবিক গুণকে নষ্ট করে ফেলছে। তুমি একজন নারীর দিকে এমনভাবে তাকাও যেন সে একটা খাবারের টুকরা, যেন সে একটা প্রাণী- আর এটাই প্রমাণ করে যে, তুমি একজন মানুষকে তার মানবিক অবস্থানমূলক সম্মানের জায়গাকে অপমানিত করছ। এটাই প্রমাণিত করে যে, তুমি নিজেই এক প্রাণীতে পরিণত হয়েছ। সুতরাং চারিত্র্যিক উন্নতি করতে হলে তোমাকে অবশ্যই প্রথমে সেই মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তারপর তোমার জীবনকে ভালো কাজ দিয়ে সুশোভিত কর, তাকে সৌন্দর্যম-িত করো।
নিজেকে ভালো করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে থাকো। যেমনÑ সুন্দর ও পারফেকটভাবে সালাত আদায় কর, কিছু প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্থ করা, কাজের ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা, পিতা-মাতার প্রতি সদয় হওয়া। আর এগুলো কিন্তু তেমন কঠিন কাজ নয়। চাইলেই পারো। আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে এগুলোই প্রত্যাশা করেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, আল্লাহ কেন আমাদের কাছে এগুলো প্রত্যাশা করেন, এগুলো কি তার কোনো উপকারে আসে? এর উত্তরে বলা যায়Ñ আমরা জানি আল্লাহর একটি নাম হল ‘গনি’ যার অর্থ ধনী, এমন ধনী যে, যার আর কোনো কিছুরই দরকার নেই কারও কাছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত ধনী। তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে, আল্লাহর আমাদের কাজ দরকার? না।
তাহলে? বরং একাজগুলো আমাদেরই দরকার, কারণ আমরাই কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত, আমরাই পাপী, আমরাই মন্দ কাজ করে আমাদের চরিত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছি। এ কারণেই আল্লাহ এসব ভালো কাজ করতে বলেছেন, যাতে তুমি উত্তম হতে পারো, হতে পারো ধনীÑ তিনি তোমার চাহিদা পূরণ করে দিবেন, তোমার উপর রহমত ও দয়া বর্ষণ করবেন। ভালো কাজ আমাদের শুধু উপকারই করে না বরং এগুলো আমাদের জন্য ওষুধস্বরূপ; কিন্তু এর অধিক উপকারিতা হলো এই যে, ভালো কাজ আমাদের দুনিয়াতেও উপকার করে আবার আখিরাতেও বোনাস হিসেবে উপকার করবে। সুবহানাল্লাহ!! যেমন তুমি তোমার মায়ের প্রতি অসৎ ছিলে, মন্দ ছিলে কিন্তু যখনই তুমি সদ্ব্যবহার করতে শুরু করলে তোমারও জীবনে কল্যাণ আসতে শুরু করল। এটা তোমার মায়ের প্রতি ভালো ব্যবহারের একটা প্রতিদান দিয়েছেন আল্লাহ। এভাবে তুমি যতই ভালো কাজ করবে, সেই ভালো কাজগুলো তোমার আরও বেশি কল্যাণের পথ দেখিয়ে দেবে। এভাবেই আল্লাহ তোমার প্রতি এই দুনিয়ায় সদয় হন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে সদা-সচেতন হয়, আল্লাহ তার জন্য অবারিত ধারায় উত্তম পথের সন্ধান দিয়ে দেন, তার কল্যাণের জন্য। আল্লাহ তার জন্য এমন জায়গা থেকে প্রতিদান দেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। এর কারণ সে আল্লাহর ব্যাপারে সচেতন হয়েছে, আর আল্লাহও তার প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখেন। আল্লাহ আমাদের কাছে এ ভালো কাজগুলো চান এবং এর বিনিময়ে তিনি আমাদের জীবনকে আরও উত্তম করে দেন, আরও সহজ করে দেন। আল্লাহ তোমাদের বোঝাকে হালকা করতে চান, যেহেতু মানুষকে দুর্বল (রূপে) করে সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা নিসা : ২৮)
তুমি কি মনে করো আড্ডা দিয়ে, গীবত করে, মিথ্যা বলে, ফেসবুকে মেয়েদের সাথে চ্যাট করে জীবন সহজ হবে? বরং তুমি তোমার জীবনকে আরও অধিক কষ্টদায়ক করছ, জীবনকে অধিক ভারী করে তুলছ। আল্লাহ তোমার জীবনকে সহজ করতে চান, তোমার বোঝাকে নামিয়ে নিতে চান, কিন্তু তুমি বুঝতে পারছ না, কারণ তুমি খুবই দুর্বল; কিন্তু আল্লাহ ‘গনি’ বা ধনী। আর তাই ঐ ধনীর (আল্লাহর) কাছে যাও এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে নিয়ে নিজের অভাব পূরণ কর। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম