আলেপ্পোতে হাহাকার খাবার পানিও পাচ্ছে না ২০ লাখ মানুষ
শান্তনূ: আলেপ্পোতে সরকারি বাহিনীর হামলা জোরদার হওয়ার এই পর্যায়ে সেখানকার ২০ লাখ মানুষ পানিহীন জীবন যাপন করছে। জাতিসংঘের তরফ থেকে পানিহীন মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আরেক ব্রিটিশ মাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে। আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বিশ্ববাসীর কাছে মানবিক সহায়তার আর্তি জানিয়েছেন আলেপ্পোর বাসিন্দারা।
সিরিয়ায় সংঘাত ও সহিংসতা বন্ধে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এক সপ্তাহের অস্ত্রবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর আলেপ্পোতে অভিযান জোরদার করেছে সরকারি বাহিনী। শনিবার সিরীয় সেনাবাহিনী ও সরকার সমর্থক মিলিশিয়ারা আলেপ্পোর উত্তরে বেশকিছু এলাকা পুনর্দখল করে। সিরীয় বাহিনীর এ অভিযানে ব্যাপক বিমানহামলা চালিয়ে সহযোগিতা করে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া।
এদিকে, সিরিয়ার হামলায় আলেপ্পোর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরটির বাসিন্দারা। কারবালার যুদ্ধের সময় যেমন করে ইয়াজিদের বাহিনী ইবনে জায়েদের নেতৃত্বে ইমাম হুসেইন-এর (রা.) দলের লোকজনদের জন্য ফোরাতের পানি বন্ধ করে দিয়েছিলেন তেমনি করেই সিরিয়ার সরকারি ও বিরোধী পক্ষ পানিকে প্রতিশোধের উপজীব্য করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সিরিয়ায় নতুন করে শুরু করা হামলায় আলেপ্পোর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি না থাকায় শহরের অবরুদ্ধ প্রায় আড়াই লাখসহ পুরো আলেপ্পোর কয়েক লাখ মানুষ প্রচ- দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, তীব্র বোমা হামলার ফলে শহরের একটি পাম্পিং স্টেশনের মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই স্টেশন থেকে শহরের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো পানি সরবরাহ করা হতো। এর প্রতিশোধ হিসেবে শহরের অন্যান্য অংশের পানি সরবরাহের পাম্প স্টেশনগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কার্যত পুরো আলেপ্পোই এখন পানিবিহীন হয়ে পড়েছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র কাইরন ডয়ার বিবিসিকে বলেন, পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আলেপ্পোর বাসিন্দাদের উপর ‘চরম দুর্দশা’ নেমে আসতে পারে। কারণ আলেপ্পোবাসীরা এখন দূষিত পানি সংগ্রহ করা শুরু করেছে, এতে সেখানে পানিবাহিত রোগ মহামারি আকার ধারণ করার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘উভয় পক্ষই পানিকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বৃহস্পতিবারের বিমান হামলায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পানি সরবরাহের পাম্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় সেটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
আলেপ্পোতে চলমান সরকারি বাহিনীর তা-বে আতঙ্কিত বোধ করছে জাতিসংঘ। বান কি মুন-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, খুবই ঠা-া মাথায় সামরিকতার বিস্তৃতি ঘটানোর এই ঘটনায় মহাসচিব আতঙ্কিত। শনিবারের দিনটিকে বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার কালো দিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে আলেপ্পোর অবরুদ্ধ মানুষেরা তাদের জন্য মানবিক সহায়তার আর্তি জানিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার কাছে তারা বলেছেন, মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া তাদের জন্য আর কিছুই যেন নেই। একজন বাসিন্দা আলজাজিরাকে বলেছেন, এমনকি মরদেহ সরানোর মতো হাতিয়ারও নেই তাদের কাছে।
মৃত্যু আর জীবনের এই সমতল যাত্রার পথ ধরেই বিদ্রোহীমুক্ত আলেপ্পোর অঙ্গীকার নিয়ে আসাদ বাহিনী বাড়িয়ে চলেছে তাদের সামরিক অভিযানের বিস্তৃতি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি