জামায়াত নেতা সাজ্জাদ ও জেএমবির আধ্যাত্মিক গুরু কাসেমকে খোঁজা হচ্ছে
আজাদ হোসেন সুমন: জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতের মধ্যসারির এক নেতা ও জঙ্গিদের তাত্ত্বিক গুরুকে খুঁজছে গোয়েন্দারা। এরা দেশের উত্তরাঞ্চলে কোথাও আত্মগোপন করে আছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলা (দক্ষিণ) জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে উত্তরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো পরিচালিত হয়। সাম্প্রতিক ঘটনায় জড়িত তিন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা মাওলানা কাসেমকে তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে মানে নব্য জেএমবির সদস্যরা। তাকে বলা হয় বড় হুজুর। এই কথিত বড় হুজুর পুরনো জেএমবির সদস্য হলেও নব্য জেএমবির কথিত জিহাদ সমর্থন করে সে মাস্টারমাইন্ড তামিমের সঙ্গে হাত মেলায়। আরবিতে পারদর্শী এই তাত্ত্বিক নেতা জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রচারপত্রের আরবি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছে। কিন্তু তিনি ইংরেজি জানেন না।
সূত্রমতে, ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও আলোচনার জন্য কাসেমকে দক্ষ করে তুলতে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে। নব্য জেএমবির ইংরেজি ভাষায় পারদর্শীরা মাওলানা কাসেমকে কোচিং করায়। তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল দিনাজপুরে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা তার সন্ধানে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে।
সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, পুরনো জেএমবির ২ শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ কার্যকর হওয়ার পর মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি পুনর্গঠন করা হয়। ২০০৯ সালে রাজধানীর জুরাইনে সাইদুরকে গ্রেফতার করা হলে অনেকটাই নিষিক্রয় হয়ে পড়ে জেএমবি। এরপর সংগঠনের দায়িত্ব নেয় তাসনিম ওরফে তালহা। দুই বছর আগে তাসনিমকে গ্রেফতার করার পর দায়িত্ব পায় সাইদুরের ছেলে সায়েম ওরফে ফাহিম। পুলিশ পরে তাকেও গ্রেফতার করলে ফারুক নামের একজন জেএমবির এই অংশের নেতৃত্বে আসে। সাইদুর বা ফারুকের নেতৃত্ব পছন্দ না হওয়ায় এরইমধ্যে ভারতে পালিয়ে যায় জেএমবির শীর্ষ কয়েকজন। যাদের মধ্যে কয়েকজনকে বর্ধমান হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ভারতে এনআইএ গ্রেফতার করেছে।
মেজর জিয়া ও মাস্টারমাইন্ড তামিমের সমন্বয়ে বাংলাদেশে থাকা পুরনো জেএমবির একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এবং আইটি এক্সপার্ট তরুণ-যুবকদের নিয়ে পুনরায় সক্রিয় হয়। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি দল ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। সূত্র জানায়, ওই সময় নাশকতায় বিশ্বাসীরা তামিমের মাধ্যমে অর্থের সরবরাহ পেতে থাকে। এরপর শুরু হয় প্রশিক্ষণ পর্ব। প্রথমদিকে বগুড়া ও গাইবান্ধায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ঢাকায়। ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই ছাড়াও আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি, গোপীবাগে ছয় খুন, পুরান ঢাকায় হোসেনী দালানে হামলা, রংপুরে জাপানি হত্যা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা, গুলশানে হামলা, শোলাকিয়ায় হামলা, গাবতলীতে পুলিশ হত্যা, আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশ হত্যা এবং বাড্ডায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খান হত্যাসহ বেশ ক’জন ব্লগারকে হত্যা করে।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান, অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, নব্য জেএমবি হচ্ছে জেএমবির একটি নতুন ফর্ম, যারা মেজর জিয়ার অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং তামিমের অর্থের জোগান পেয়ে অতিমাত্রায় জিহাদি বা সশস্ত্র হয়ে উঠেছে। মেজর জিয়া ও জামায়াত নেতা ও আধ্যাত্মিক গুরুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) হুমায়ুন কবীর রংপুর বিভাগের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক থাকাকালে জঙ্গিরা জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিকে হত্যা করে। গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, জঙ্গিরা রংপুর বিভাগের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতো। ওই সময় বহু জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ মেজর জিয়া, জামায়াত নেতা সাজ্জাদ ও কথিত আধ্যাত্মিক গুরু কাসেমকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে সম্ভাব্য স্থানগুলোয় এরইমধ্যে অভিযান চালিয়েছে। তারা পুলিশের নেটওয়ার্কের মধ্যেই আছেÑ ধরা পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।