এখন শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ
সুভাষ সিংহ রায়
বহু জন্মদিনে গাঁথা আমার জীবনে
দেখিলাম আপনারে বিচিত্র রূপের সমাবেশেÑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ ডিগ্রিতে ভূষিত করে। এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জন ওয়েসলিং নিম্নে প্রদত্ত প্রমাণপত্র ‘সাইটেশান’ পাঠ করেন:
‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ।
আপনার পিতা বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর আপনিও বারবার নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে এবং নিজের জীবনকে বিপণœ করে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন। সরল অথচ তীক্ষ্ম বাগ্মিতা দিয়ে আপনি দেশের জনগণের জন্য আপনার সংগ্রামের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তা হলো ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’। প্রায়ই দেখা যায়, তৃতীয় বিশে^র জনগণকে ভোটের বিনিময়ে ভাতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই পায় না। অথচ, আপনার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের ভাত ও ভোট দুটোর নিশ্চয়তাই পাবে।বাংলাদেশের জনগণের এবটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সাহস, আর এই সাহস কেবল তাদের ধৈর্যের পরিচায়কই নয়, এর দ্বারা নিজেদের সমৃদ্ধিও বয়ে এনেছে তারা।
যে বছর আপনি জন্মগ্রহণ করেন, সে বছর জনগণ বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আর সেই কারণে আপনার পিতা সিকি শতাব্দী ধরে বাংলার স্বায়ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন করেন। কিন্তু তাকে ও তার জনগণকে একসঙ্গে স্বাধীনতার ফল ভোগ করার সুযোগ বেশিদিন দেওয়া হয়নি। যেসব অফিসার আপনার পিতা, মাতা ও তিন ভাইকে হত্যা করেছে, তারা ভেবেছিল, বাংলার মানুষের প্রতি আপনার পরিবারের সেবা-ভালোবাসার সুযোগ তারা খতম করে দিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা সুদূরপরাহত করতে পেরেছে। কিন্তু আপনাকে তারা গণনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আপনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল ধারায় প্রকাশ্য ও গোপন সামরিক শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আর এই অস্থির প্রেক্ষাপটের বিপরীত ধারায় ছিল দুটো জিনিস। প্রথমত, বাংলার জনগণ এবং দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা। সে সময় সেই গণতন্ত্রের কথা কেউ ভুলে যায়নি, যার প্রেক্ষিতেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। আপনার সত্য কথা বলার অবিচল দৃঢ়তা আপনাকে অপশাসকদের কাছে বিপজ্জনক করে তুলেছিল। তারা আপনাকে আপনার পিতার বাসভবনে বন্দি করে রাখলেও আপনার উদ্যমকে, আপনার চেতনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিশাল দূর্গের মতো পৈত্রিক বাড়ি ও তার উত্তরাধিকারের মধ্যে আটকে থাকলেও আপনার বসবাস ছিল সেই মুক্তির মধ্যে, যে মুক্তি হলো সাহসিকতার মুক্তি। আর আপনার পিতার একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার সিকি শতাব্দী পর আজ আপনি সেখানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন।
হাসিনা বিনতে মুজিব একজন মহান পিতার সুযোগ্য কন্যা, একটি যোগ্য জনগোষ্ঠীর মহান সেবক। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় গর্বের সঙ্গে আপনাকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করছে।’ (দৈনিক ভোরের কাগজ, ঢাকা: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭)
শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। জননেত্রী, দেশরতœ, ভাষাকন্যা ইত্যাদি নানা বিশেষণ তাকে ভূষিত করা হয়। পুরনো দিনের মানুষরা একান্ত নিজের মতো করে বলেন, ‘শেখের বেটি’। বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার জন্য কত প্রকার চেষ্টাই না করেছে। শেখ হাসিনাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। অনেকের মনে থাকার কথা ১/১১ সরকারের সময় ঢাকা শহরের ২৫ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন। শেখ হাসিনার সততা ও দেশপ্রেমের জন্য স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার কাছে কাজটাই বড়। দেশের সকল জনের কাজ, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে কাজ। আমজনতা নিশ্চিত করে বলতে পারেÑ শেখ হাসিনা আমাদের, শেখ হাসিনার কাজ আমাদের কাজ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশের দিকে উন্নত দেশের নেতারা অবাক হয়ে বলেন, মাননীয় শেখ হাসিনা, আপনি তো উন্নয়ন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন। শেখ হাসিনা চিন্তায় একটা জীবন্ত রূপ আছে। যে মৌল প্রত্যয়গুলো নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন তা কোনোদিনই পরিবর্তিত হয়নি। কয়েকটি মূলসূত্রে এই প্রত্যয়গুলো বিদ্ধৃত। সূত্রগুলো এইÑ মানবতায় বিশ্বাস, শান্তি, প্রীতি, ঐক্য ও সংহতিতে সমাজ-আদর্শের সন্ধান, সর্ববিধ নিপীড়ন, সংকীর্ণতর বিরোধিতা। যে পথ সহজ সরল, যে পথ কেন্দ্র থেকে বহুমুখী সে পথকে একমাত্র পথ হিসেবে গণ্য করা। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখীবন্ধন উৎসবে যে গান লিখেছিলেন তা আমরা স্মরণে আনতে পারি।
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা, সত্য হোক, সত্য হোক, সত্য হোক হে ভগবান। (চলবে)
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান