নূর চৌধুরীকে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে ফেরত আনা হতে পারে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উপায় ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দু-তিনটি উপায় বের করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এগুলো কানাডাকে জানানো হবে। এরপর আলোচনা করেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ আইনি বিষয়গুলো মেনেই তাকে ফেরতের ব্যাপারে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইছে। এদিকে কানাডার সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যাতে নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয় সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। এনিয়ে দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। তবে এখনো দুদেশ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
সরকারের নীতিনির্ধারক তিনজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে কাজ করছেন। তারা চেষ্টা করছেন যে কোনোভাবেই হোক নূর চৌধুরীকে কানাডা ও রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনতে। তাদের ফেরত এনে মৃত্যুদ- কার্যকর করবে। একজন মন্ত্রী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। আরেকজন আইনি বিষয়গুলো দেখছেন। এছাড়া অপর এক মন্ত্রী ইন্টারপোল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব সংস্থার সহায়তা নেওয়া সম্ভব সেই চেষ্টা করছেন।
সূত্র জানায়, কানাডার সংবিধান ও আইনের মাধ্যমে তাকে সরাসরি বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদনের বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিষ্পত্তি হলে ও সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে কানাডা সরকার যেকোনো সময় তাকে কানাডার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে। তাকে এমন কোনো দেশে পাঠানো হতে পারে যে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময়, আসামি বিনিময় বা ফেরত দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। পরবর্তীতে ওই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসামি ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, কানাডার কাছে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। কানাডার সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে কাজ করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারক একজন বলেন, কানাডার আইনে তাকে সরাসরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা কিংবা ফেরত দেওয়া কঠিন। কানাডার সংবিধানে মৃত্যুদ- পাওয়া কোনো আসামিকে তার দেশের কাছে ফেরত দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এতে কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠতে পারে। সে ধরনের কোনো সুযোগ তৈরি করতে চাইছে না কানাডা।
কানাডা তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য উপায় খোঁজার এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাসও দিয়েছে। সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ একাধিক মন্ত্রী কাজ করছেন।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার উপায় আছে। সে জন্য আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমি আশাবাদী আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ উপায়ে তাকে ফেরত আনা সম্ভব হবে। আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। আলোচনা চলছে। এখন কোনো কথা বলা ঠিক হবে না।
সূত্র জানায়, কানাডা নূর চৌধুরীকে শেষ পর্যন্ত যদি অন্য দেশে ফেরত পাঠায়, তাহলে সে যাতে ওই দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে যেতে না পারে বাংলাদেশ সে চেষ্টাও করবে। এসব বিষয়ে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতা করেই তাকে এমন দেশে ফেরত পাঠাবে যে দেশ থেকে বাংলাদেশের পক্ষে যেকোনো আসামি কিংবা অপরাধীকে ফেরত নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশে আসামি ফেরত পাঠানোর নজির রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও আগে থেকেই আলোচনা করতে হবে। এছাড়া অন্য কয়েকটি দেশের নামও আলোচনায় রয়েছে।