গ্রেফতার জঙ্গিদের ব্যাপারে খবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধরী : কলকতায় গ্রেফতার জঙ্গিদের মধ্যে বাংলাদেশি বলে যাদের পরিচয় প্রকাশ করেছে ভারত, তাদের ব্যাপারে খবর নিচ্ছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারা পরিচয় নিশ্চিত হলে এরপর এই ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে ভারত চাইলে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে পারে। ভারত তাদেরকে ফেরত দিতে চাইলে তাদেরকে ফেরত এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভারত ফেরত না দিলে সেই ক্ষেত্রে ওই দেশেই তাদের বিচার হবে তারা যে অপরাধ করেছেন সেই জন্য।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যাদেরকে ধরা হয়েছে তারা বাংলাদেশি বলে ভারত দাবি করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কলকাতায় কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের যে ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানেও খোজ নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি দমনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণভাবে নিয়ম হচ্ছে যখন যে দেশে কোনো ব্যক্তি অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যায় ও প্রমাণ মিলে তখন সেই দেশের আইন অনুযায়ী ওই অপরাধের বিচার হয়ে থাকে। এই কারণে তারা বাংলাদেশি হলেও এখনই তারা ফেরত দিবে এমনটি নাও হতে পারে। এর আগে প্রয়োজন পরিচয় নিশ্চিত হওয়া। সেটাই আমরা করবো।
ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, পূজার আগে রাজ্যে বড় ধরনের হামলার ছক বানচাল করল কলকাতা পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের বিভিন্ন জায়গা থেকে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ (স্পেশাল টাস্কফোর্স)-এর জালে ধরা পড়েছে ৬ জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদীন) সদস্য। আটকদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশের বাসিন্দা ও বাকিরা ভারতীয় বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গ। এদের মধ্যে ৩ জনের খোঁজে আগে থেকেই তল্লাশি চালাচ্ছিল এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)। আটকদের একজনের সঙ্গে খাগড়াগড় বিস্ফোরণকা-ের যোগ আছে বলে জানা গেছে।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম বলেছেন, তাদের খোঁজে পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, প্রাথমিক তদন্তে কলকাতার পুলিশ জানতে পেরেছে, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতেও হামলার ছক কষেছিল জামায়াতের এই ছয় জঙ্গি।
ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সব জঙ্গি প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশি কিনা, হলে কত দিন ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছে, কি কারণে তারা ভারতে গেছে তাও দেখছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
এদিকে এই পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের পরিচয় হিসাবে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, আনোয়ার হুসেন ফারুক বাংলার সংগঠনের মূল মাথা। বাড়তি বাংলাদেশের জামালপুরে। বাংলার সংগঠনের অর্থনৈতিক বিষয়টা দেখে আনোয়ার। এর খোঁজ করছিল বাংলাদেশ পুলিশও। মৌলানা ইউসুফ, মঙ্গলকোটের বাসিন্দা। বাংলায় জঙ্গি তৈরিতে এর বড় ভূমিকা রয়েছে।
রাজ্যে যেসব মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হত সেইসব মাদ্রাসায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করত মৌলানা ইউসুফ। সাহিদুল ইসলামের বাড়তি অসমের বারপেটায়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে নাম জড়িত আছে এই জামায়াত সদস্যের। উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি সংগঠনের দায়িত্বে ছিল সাহিদুল। অনেকদিন ধরে এনআইএ এই জঙ্গি সংগঠকের খোঁজ চালাচ্ছিল।
আটক আবদুল কালামের বাড়িও অসমের বারপেটায়। ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরিতে ওস্তাদ কালাম। এরও খোঁজ করছিল এনআএ। মহম্মদ রুবেলও বাংলাদেশের জামালপুরের বাসিন্দা। বাংলাদেশের নেতাদের এদেশে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল রুবেলের উপর। ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরিতে তুখোড় এই বাংলাদেশি। কলকাতার পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, ভুয়া পরিচয়পত্র, ডিটোনেটর, বিস্ফোরক পাউডার, মোবাইল ফোন, ঝউ কার্ড, বিয়ারিং বল, তার ও তার কাটার জিনিস উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় জঙ্গিকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)। তারা বলেছে, গ্রেফতারদের মধ্যে ভারতে নিযুক্ত জেএমবির দুই প্রধান ছাড়াও তিনজন বাংলাদেশি। জেএমবির এই সদস্যরা ভারতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে এসটিএফ। আনন্দবাজারও এনিয়ে খবর প্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ সোমবার কলকাতার লালবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওই ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল সংস্থা। জেএমবি সদস্য কালাম বাংলাদেশ থেকে আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে কাছাড়ে সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসা জেএমবি সদস্যদের ভারতে থাকার ব্যবস্থা করে দিত রফিক। রফিকের কাছে বাংলাদেশি ট্রেড লাইসেন্সও পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল তারা। এরমধ্যে কলকাতা ছিল না। দক্ষিণ বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো জায়গায় বড় ধরনের হামলার করতো তারা। বাংলাদেশে জঙ্গি দমনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এই ব্যাপারে খতিয়ে দেখছেন। ঘটনার সত্যতা পেলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। ভারত এর আগে বার বার অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশয় দিচ্ছে। বাংলাদেশ সব সময়ই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কোনো সন্ত্রাসীকে প্রশয় দেওয়া হচ্ছে না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম