![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
কলকাতায় ছয় জেএমবি সদস্য গ্রেফতার, ৩ জন বাংলাদেশি
মাসুদ আলম ও সুজন কৈরী : নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় জঙ্গিকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)। এদের মধ্যে ভারতে নিযুক্ত জেএমবির দুই প্রধান রয়েছে। গ্রেফতার ছয়জনের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে দাবি করেছে ভারতীয় পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা ভারতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে এসটিএফ। তিনজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)-এর সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট যোগাযোগ করছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গতকাল সোমবার এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ কলকাতার লালবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গ্রেফতার ছয়জন ২০১৪ সালে বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওই ঘটনার পর উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের একাধিক জায়গা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশের নাগরিক। বাকিরা ভারতের। তারা হলোÑ আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাই, জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জাবিরুল, মোহাম্মদ রফিক ওরফে রুবেল ওরফে পিছি, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, শাহিদুল ওরফে সূর্য ওরফে শামিম ও আবদুল কালাম ওরফে কলিম। গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম খাগড়াগড় মামলার চার্জশিটে রেখেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল সংস্থা।
তিনি আরও জানান, দুদিন আগে আসামের কাছাড় থেকে একটা জালনোটের মামলায় কলকাতা এসটিএফ জাবিরুলকে গ্রেফতার করে। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জাবিরুল জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রোববার নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে কালামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেএমবির গ্রেফতার ছয় সদস্য সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত। সেই ভাষার অর্থ খুঁজে বের করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, জেএমবি সদস্য কালাম বাংলাদেশ থেকে আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে কাছাড় সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর উত্তর২৪ পরগনার বনগাঁ-বাগদা রোডের ওপর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি জায়গা থেকে ইনাম ও রফিককে গ্রেফতার করা হয়। ইনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেএমবি ইউনিটের প্রধান। তার বাড়ি বাংলাদেশের জামালপুরে। রফিকের বাড়িও ওই একই জায়গায়। তিনি ইম্প্রোভাইজড এক্সক্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরিতে পারদর্শী। বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসা জেএমবি সদস্যদের ভারতে থাকার ব্যবস্থা করে দিত রফিক।
বিশাল গর্গ বলেন, উত্তর২৪ পরগনা জেলারই বসিরহাটের নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ইউসুফ ও শাহিদুলকে। ইউসুফের বাড়ি বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে।
তার সন্ধান দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। এসটিএফ দাবি করেছে, শাহিদুল উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান হিসেবে কাজ করত। ভারতে বিভিন্ন নাশকতামূলক ছকের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। তার বাড়ি আসামের বরপেটায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতার ছয়জনের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। সঙ্গে নাশকতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাগজপত্র, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, প্রায় দুই কেজি সাদা বিস্ফোরক পাউডার, বিয়ারিং-বল, তার কাটা যায় এমন জিনিস ও ব্যাটারি। রফিকের কাছে কেমিক্যাল কমপাউন্ডের একটি বই পাওয়া গেছে। ইউসুফ ও ইনামের কাছে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক। ইনামের কাছে একটা সাংগঠনিক ছকও পাওয়া গেছে। রফিকের কাছে বাংলাদেশি ট্রেড লাইসেন্সও মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ছয়জন স্বীকার করেছে যে, একটি বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল তারা। তবে কলকাতা নয়, দক্ষিণ বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো জায়গায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)