চিরবিদায় নিতে হলো ফরিদপুরের নবজাতক গালিবা হায়াতকে
রিকু আমির : চিরবিদায় নিতে হলো ফরিদপুরের নবজাতক গালিবা হায়াতকে। যে নবজাতককে মৃত ভেবে দাফন করার সময় নড়েচড়ে উঠেছিল। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুর থেকে আনা হয়েছিল ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ নবজাতকের মৃত্যু হয়। অপরিপক্বতা, কম ওজন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়া ও রক্তনালী সংকুচিত হয়ে হৃৎপি- কাজ না করায় গালিবার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গালিবার চিকিৎসায় গঠিত ১২ সদস্যের দলের প্রধান স্কয়ার হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবু ইউসূফ রাজ। তিনি বলেন, ‘শিশুটির রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় হার্ট কাজ করছিল না। তার প্রেসার আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। শিশুটির শরীরের প্রতিটি অর্গান আন্ডারডেভেলপ ছিল। যদি আরও একটু সময় পেতাম, তবে বাঁচানো যেতো। ফুসফুস তো আর রাতারাতি ডেভেলপ করানো যায় না। তার ম্যাচিউরিটি যত বাড়ত, ওজনও তত বাড়ত।
আবু ইউসূফ রাজ জানান, স্কয়ার হাসপাতালে ২৪ সপ্তাহ ও ৬০০ গ্রাম ওজনের শিশু বাঁচানোর রেকর্ড আছে। কিন্তু শিশুটি ছিল ২৩ সপ্তাহের এবং ৪৫০ গ্রাম ওজনের। এ পাঁচ/সাত দিনের গ্যাপ অনেক বড়। ২৩ সপ্তাহেই শিশুটির জন্ম হয়, যা অপরিণত। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। এর আগে শিশুটি বেশ কয়েক হাত ঘুরে এসেছে। এ কারণে তার বেশকিছু ইনফেকশনও ছিল।
গতকাল সকাল ৯টায় নবজাতক গালিবার মরদেহ হস্তান্তরের কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে দেরি হয়েছে বলে জানান গালিবার চাচা শামীমুল।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আমরা তাদের সেবায় সন্তুষ্ট। তবে দেশের সব চিকিৎসকের প্রতি অনুরোধ তারা যেন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা না করেন’। সোমবার বেলা ১২টার দিকে গালিবাকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, স্কয়ার হাসপাতালে তাদের মোট বিল হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে বিলের অর্ধেক বহন করেছেন। বাকি টাকা আমরা দিয়েছি। গালিবাকে বাদ আসর ফরিদপুরের আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান তিনি।
গালিবার বাবা নাজমুল হুদা তার সন্তানের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসক রিজিয়া আলমের অবহেলাকে দায়ী করেন। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে আসেননি নাজমুল।
মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার যদি সময়মত ব্যবস্থা নিতেন, আমার স্ত্রীকে চিকিৎসা দিতেন তাহলে আমার সন্তান মারা যেত না। একথাটা অন্তত বলতে পারতাম, অবহেলায় আমার সন্তান মারা যায়নি’।
২২ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের ডা. জাহেদ শিশু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হয় ক্রিকেট খেলোয়াড় নাজমুল হুদা মিঠু ও নাজনীন আক্তারের প্রথম সন্তান গালিবা হায়াত। কিন্তু জন্মের পর নবজাতকের হার্টবিট না পাওয়ায় হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. রিজিয়া আলম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই শিশুটিকে দাফন করতে কবরস্থানে নেওয়া হলে দাফনের আগে সে নড়ে উঠে। এরপর দ্রুত তাকে ওই হাসপাতালেই ইনকিউবিটরে রাখা হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে স্কয়ার হাসপাতালে এনে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। সম্পাদনা : হাসান আরিফ