শেখ হাসিনার মানবিক আখ্যান
মিল্টন বিশ্বাস
সকল ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’ ১৮ অক্টোবর (২০১৩) সম্প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণই ৫ জানুয়ারি (২০১৪) দশম সংসদ নির্বাচন পূর্বে জনগণের কাছে শুভ উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হয়। তিনি নির্ভরতার উৎস হয়ে ওঠেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে সাংবিধানিক উপায়কে অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রকৃতঅর্থে বাস্তব হয়ে উঠেছে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর। কেবল নতুন সরকার নয় গত ২০১৩-১৪ এর বছর জুড়ে এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস অবরোধ-হরতালের নামে দেশের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের তা-ব ও হত্যালিপ্সা বন্ধ করার পুরো কৃতিত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। এমনকি বর্তমান সরকারের গত আমলে অর্জিত সকল সফল কর্মকা-ের প্রশংসা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে।
দশম নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐকান্তিক প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে। আর আগামী প্রজন্মকে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখানোর কথা বলা হয়েছিল ‘নির্বাচনি ইশতেহারে’। স্বপ্ন দেখানো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে যে দেশে, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের দৃঢ় অঙ্গীকার তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করেছিল এটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা সংবিধান অনুসরণ করেই তার উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার আগ্রণী ভূমিকা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।
৩. আসলে শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বই স্মরণ করিয়ে দেয় আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হচ্ছে যেমনটি বর্তমান প্রজন্ম হাল ধরেছে এই সংগঠনটির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয়ে জানিয়েছেন, ‘দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়বই’। এজন্য তিনি বর্তমান বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে মর্যাদাকর ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। নিজের নিঃস্বার্থ, নির্লোভী মানসিকতার জন্য পৃথিবীর খ্যাতনামা শাসকদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। শেখ হাসিনা নিজের দেশকে নিয়ে যেমন স্বপ্ন দেখেন তেমনি বিশ্ববাসীকে সঙ্গে নিয়ে সুখী জনজীবনের প্রত্যাশায় বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মিলেমিশে কাজ করতেও চান। বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব দেখতে চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে। দারিদ্র বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো প্রণিধানযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষাখাত এই সবকটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রামের ফলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারই আমরা দেখতে পাই। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নেতৃত্বের এটি অন্যতম দিক। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন বলেই আমরা এই অর্জন নিশ্চিত করতে পেরেছি।’ তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দারিদ্র বিমোচনে ব্যাপকভাবে কাজ করে আসছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বাড়ানো ও মান উন্নত করাসহ বিভিন্নভাবে কাজ করা হয়েছে। আর তার ফলেই আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিটি অঙ্গীকার পূর্ণ হয়েছে গত মহাজোট শাসনামলেই (২০০৯-২০১৩)। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং অকার্যকর রাষ্ট্রের কলঙ্কমোচন করে বাংলাদেশকে আবার বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের অন্যতম এখন বাংলাদেশ। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে সুখী দেশের তালিকায়। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। (চলবে…)
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান