‘গরু’ ও ‘যুদ্ধ’বিষয়ক জটিলতা
কাকন রেজা
এসব স্বঘোষিত ‘গো রক্ষক’রা ‘পশু অধিকার রক্ষা’র নামে ‘পশুর প্রতি নির্মমতা বন্ধের’ অজুহাতে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় নিয়মনীতির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে। পশু প্রেম তাদের এতই মাথায় চড়েছে যে নিজের দেশের ‘ইমেজ’ সারাবিশ্বে ক্ষুণœ করতেও তাদের বিবেকে বাঁধেনি।
কদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খবর করেছে, সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি গোশত খাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে আর সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। আর গরুর গোশত রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম কাতারে ভারত। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সপ্তাহে একটা দিন গোশত খাওয়ার সামর্থ্য রাখে না, রপ্তানি তো ‘দূর কি বাত’ সেই দেশে ‘পশু রক্ষার পাশবিক আন্দোলন’ প্রায় প্রতিবেশীকে ছাড়াতে বসেছে। ‘পাশবিক আন্দোলন’ বলা ভুল হলো না তো? পশুর সঙ্গে তো পাশবিকই যায় ‘মানবিক আন্দোলন’ তো হতে পারে না, নাকি?
গরু রক্ষার অজুহাতে সারাবিশ্বে ‘রক্ত নদী’র খবর ছড়িয়ে যারা দেশের ইমেজের বারোটা বাজানোর চেষ্টা করছেন বা করেছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গরু বা অন্য পশু হত্যার প্রক্রিয়াটি কি, কিংবা ভারতেই বলির প্রক্রিয়াটি কি খুবই আরামাদয়ক কিনা? ইউটিউবে এ বিষয়ে অনেক ভিডিও ক্লিপ পাওয়া যায়। অবশ্য এসবে তাদের সময় নেই। তারা ঢাকার রাস্তার বদ্ধপানিতে ফটোশপের কারিশমায় সিঁদূরের রং ছড়াতেই ব্যস্ত।
ঢাকার রাস্তার পানিবদ্ধতা ‘রক্তনদী’ হলে যে আমরাও অসভ্য হয়ে যাই, বর্বর হয়ে যাই। নিজেদের ‘কসাই’ প্রমাণ করার এ কেমন আত্মঘাতী প্রচেষ্টা। পাগলও তো নিজের ভালোটা বোঝে, সেও নিজের পায়ে কুড়াল দিতে চাইবে না। আর যারা এই কাজটি করেছেন তারা নিশ্চয়ই কেউ পাগল নন। তাহলে কেন! স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, তারা কি আমাদের কেউ, আমার দেশের?
আত্মঘাতী এই কাজ কারবার যে বিশ্বের কাছে আমাদের দেশের নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষকে বর্বর আর অসভ্য প্রমাণের অপচেষ্টা তা পরিষ্কার। কিন্তু কোনো কারণে এবং কেন তারা এমন চেষ্টায় রত তা পরিষ্কার নয়। তাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শিক বিষয়টিও গোলমেলে। নিজেদের ‘পশু’ প্রেমিক প্রমাণ করার জন্য ‘মানবপ্রেম’ এমনকি দেশপ্রেমের ব্যাপারটিও তারা ভুলতে বসেছেন।
সত্যিই আমাদের মতো আমজনতার বোধের অগম্য এমন কর্মকা-। তবে ভোতা মাথায় এটুকু অন্তত ঢোকে যে, ‘কার্য কারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না’। অবশ্য কেউ কেউ একে ‘করণ’ পানের ‘দুষ্টুমি’ বলে এড়িয়ে যেতে চাইবেন। তা যান, অসুবিধা নেই। কিন্তু অন্ধ হলেই তো আর প্রলয় বন্ধ থাকে না। প্রকৃতি রুদ্র হলে তার কাছে আপন পর সবই সমান।
শুরুর মতো শেষেও একটু যুদ্ধের কথায় আসি। ভারত, পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। আর প্রচলিত অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের দিক থেকে পাকিস্তান পিছিয়ে থাকলেও পারমাণবিক শক্তিতে বিভিন্ন সংবাদের তথ্যানুযায়ী ভারতের চেয়ে পিছিয়ে নেই। সুতরাং আক্রান্ত হলে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগ করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর তার পরিণাম কি হবে এ দুটি দেশই তা নিয়ে ওয়াকিবহাল। (চলবে)
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান