কাশ্মীর তুমি কার?
সৈয়দ রশিদ আলম
২৫ অক্টোবর, ১৯৯০। চারজন বাংলাদেশি পর্যটকদের নিয়ে পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরে উপস্থিত হলাম। সেখানে গিয়ে মনে হলো, ভারতবর্ষের মধ্যে সবচাইতে সুন্দর যে জায়গা, যার তুলনা সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে করা হয় সেই কাশ্মীর আসলেই ভূ-স্বর্গ। সুইজারল্যান্ডে যা নেই, এই কাশ্মীরে তাই আছে। পর্যটকরা বারবার কাশ্মীরে যেতে চাইলেও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চিরবৈরিতা কাশ্মীর যেতে আগ্রহীদের আতঙ্কিত করে তোলে। রোজা ও বাজরাঙ্গি ভাইজান, বোম্বের সুপারহিট এই দুটি ছবিতে কাশ্মীরকে তুলে ধরা হয়েছে অর্থাৎ ওই দুটি ছবির পুরো শুটিংটাই কাশ্মীরে চিত্রায়িত হয়েছিল। ছবিতে কাশ্মীরকে যতটা সুন্দর দেখিয়েছিল কাশ্মীর তার চাইতে শতগুণ বেশি সুন্দর। কাশ্মীর মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। বিভক্ত তিনটি অংশ হলোÑ কাশ্মীর, জুম্মু ও লাদাখ। কাশ্মীরে মুসলমানদের বসবাস, জুম্মুতে হিন্দুদের বসবাস ও লাদাখে তিব্বতি বৈদ্ধদের বসবাস।
কাশ্মীরের মহারাজ হরি সিং আলাদাভাবে কাশ্মীর শাসন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতপন্থি শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরকে ভারতের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। তখন থেকেই মূলত কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মত-পার্থক্য শুরু। কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তানের দখলে যার নাম আজাদ কাশ্মীর। একটি অংশ চীনের দখলে, আরেকটি অংশ ভারতের দখলে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগবে কাশ্মীর আসলে কার? ভারতের নাকি পাকিস্তানের? কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উভয় দেশ কাশ্মীর তার এটাই বলতে চাচ্ছে। কিন্তু কাশ্মীর ভ্রমণ করে মনে হয়েছে, কাশ্মীরীরা আলাদাভাবেই থাকতে চান, কিন্তু ভারত বা পাকিস্তান কোনোদিনই কাশ্মীরীদের স্বাধীনভাবে থাকতে দিবে না। কারণ, কাশ্মীরের ভৌগলিক অবস্থান এমন এক জায়গায়, যার দিকে দীর্ঘদিন থেকে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের নজর রয়েছে।
কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে পাকিস্তান-চীনের সঙ্গে সড়ক পথ তৈরি করেছে। চীনের সমরাস্ত্র এই পথ থেকেই পাকিস্তান পেয়ে থাকে। ভারতের উপর নজরদারি করার জন্য চীনের উপস্থিতি সহজ হয়ে গেছে পাকিস্তানের সহযোগিতায়। সীমান্ত যুদ্ধে পাকিস্তান কখনই ভারতের কাছে কাশ্মীর ফ্রন্টে পরাজিত হয়নি। কারণ, কাশ্মীরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সেই সদস্যদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয় যারা পাকিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা। এই বাসিন্দারা জন্মগতভাবে লড়াকু। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তানের নেতারা জানেন কাশ্মীর সমস্যার কোনো সমাধান নেই। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও কাশ্মীরবাসীর ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। তা না হলে কাশ্মীর হতো পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। যা আজ শ্মশ্মানে পরিণত হয়েছে দুটি দেশের বৈরিতার কারণে।
কাশ্মীরের ঝিলাম নদীতে পর্যটকরা যখন নৌভ্রমণে বের হন তখন তাদের কাছে মনে হয়, সারাটি জীবন যদি এই ভূ-স্বর্গে থেকে যেতে পারতাম? কাশ্মীরের প্রাণকেন্দ্র গুলমার্গ। এই গুলমার্গে গিয়ে মনে হবে, স্বর্গে চলে এসেছি। এখানে শতশত আপেল, চেরি ও মালটার গাছ রয়েছে। পর্যটকরা গুলমার্গে গিয়ে স্বর্গের বাগানে চলে এসেছেন এটাই বলে থাকেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা এই স্বর্গের বাগান কতদিন স্বর্গের বাগান হয়ে থাকবে, নাকি নরকের বাগানে পরিণত হবে?
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান