ওসি-ইউএনওর বিষয়ে আদেশ ১৮ অক্টোবর নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বির
এস এম নূর মোহাম্মদ : ভ্রাম্যমাণ আদালতে স্কুলছাত্রকে দুই বছরের কারাদ- দেওয়ায় টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমের বিষয়ে আগামী ১৮ অক্টোবর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং আদালতে ওই শিক্ষার্থীর দেওয়া বক্তব্যও ওই সময়ের মধ্যে এফিডেবিট আকারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। গতকাল শুরুতে ইউএনও এবং ওসি আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তাদের আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন ও শ ম রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, এই সাজা দেওয়ার সঙ্গে এমপির করা জিডির কোনো সম্পর্ক নেই। গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই ছেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক নয় উল্লেখ করে তার ১০ মে ১৯৯৫ সালে জন্ম তারিখ সম্বলিত পাসপোর্ট দেখান তারা।
ইউএনও ও ওসির ব্যাখ্যার পর আদালত শিক্ষার্থী সাব্বিরের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। এসময় তার ওপর করা নির্যাতনের বর্ননা শুনে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা স্তম্ভিত হয়ে যান। গাঁজা উদ্ধারের কথা অস্বীকার করে সাব্বির ঘটনার বর্ণনায় আদালতে বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৯টার সময় আমি বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় কেউ আমাকে ডাক দেয়Ñ সাব্বির বাড়িতে আছো। বাইরে এসে দেখি সিভিল ড্রেসে একজন ও আরেকজন পোষাক পরা পুলিশ। তারা আমাকে বলেন, তোমাকে থানায় যেতে হবে। এরপর আমাকে থানার ওসির রুমে নিয়ে যায়। ওসি আমাকে মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলে, এগুলো কী লিখছস। আমি বলেছি, এগুলো আমি লিখি নাই। তারপরও বারবার আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে মারধর করা হয়। এরপর আমাকে এমপি সাহেবের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি সেখানে গিয়ে দেখি তিনি সোফায় বসে আছেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আমাকে বলেন, তুই আমার বিরুদ্ধে কী লিখছস?। এরপর এমপি আমাকে লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি করেন। কিন্তু এতে আমি কিছু মনে করি নাই।’
সাব্বির বলেন, ‘এসময় এমপি ওসিকে বলে, ওকে থানায় নিয়ে যাও। তারপর আমাকে থানায় নিয়ে এসে চোখ হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে এবং বলে, তোকে ক্রসফায়ারে দিব। ক্রসফায়ারের ভয় এবং নির্যাতনে আমি স্বীকার করি ফেইসবুকে লেখার কথা। তারপর আমাকে বলে, এ ধরনের লেখা আর লিখবি না। এ ঘটনার তিনদিন পর আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আমাকে বুকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এসময় আমার হুঁশ ছিল না। কে যেন আমাকে ঐখান থেকে উঠিয়ে নেয়। এরপর আমাকে থানায় নিলে ওসি বলেন, তোমাকে দুই বছরের দ- দেওয়া হয়েছে।’ এ কথা বলেই সাব্বির আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং বলে, আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।
এ বক্তব্য কেউ শিখিয়ে দিয়েছে কি না আদালত জানতে চাইলে সাব্বির বলেন, কেউ শিখিয়ে দেয়নি। আমি গাঁজা খাই না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। পরে আদালত ১৮ অক্টোবর আদেশের জন্য রাখেন।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্থানীয় সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়ের ব্যাপারে অবমাননাকর মন্তব্য করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী ইউএনও স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বিরকে দুই বছরের দ- দেন বলে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডেইলি স্টার। বিষয়টি পরে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সখিপুরের ওসি এবং ইউএনওকে আদালতে হাজির হয়ে হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্কুল শিক্ষার্থীকে আদালত জামিনে মুক্তিরও নির্দেশ দেন।
ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় গত শুক্রবার রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যাতে বলা হয়, ফেইসবুকের একটি আইডি থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই জিডির প্রেক্ষিতে সখিপুর থানার পুলিশ উপজেলার প্রতিমা বণিক পাবলিক হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির সিকদারকে আটক করে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের কারাদ- দেন। কারাদ-ের পর ওই শিক্ষার্থীকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন সখিপুরের ওসি মাকসুদুল আলম।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী