মরদেহ ঢাকায় আসছে আজ, শুক্রবার দাফন, বিএনপির ৪ দিনের কর্মসূচি বিএনপি নেতা হান্নান শাহ আর নেই
শাহানুজ্জামান টিটু: বিএনপির দুঃসময়ের কা-ারি ওয়ান ইলেভেনের কঠিন সময়ে খালেদা জিয়ার পাশে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সিঙ্গাপুরের রাফেলস হার্ট সেন্টারে স্থানীয় সময় ৩টা ৩৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। দলের জন্য অপরিহার্য প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে দলটির সবস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। হান্নান শাহ-এর স্মরণে চারদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোক বই খোলা হয়েছে।
হান্নান শাহ-এর পরিবারের সদস্যরা জানান, সিঙ্গাপুরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আজ রাত ৯টায় বাংলাদেশ বিমানে তার মরদেহ দেশে পৌঁছবে। রাতে মরদেহ সিএমএইচ হিমাগারে রাখা হবে। তারপর ঢাকাসহ তার নিজ নির্বাচনি এলাকায় সাতটি নামাজে জানাজা শেষে আগামী শুক্রবার গাজীপুর কাপাসিয়ায় নিজ গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। হান্নান শাহ-এর মরদেহ দেশে আনার আগে গতকাল মঙ্গলবার বাদ এশা সিঙ্গাপুরের অ্যাঙ্গলিয়া মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সিঙ্গাপুর প্রবাসী দলের নেতাকর্মীরা শরিক হন।
বিএনপির ৪ দিনের কর্মসূচি : মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া শোক কর্মসূচি চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত। এ সময় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়সমূহে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং শোকসূচক কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সারাদেশে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
নামাজে জানাজা : বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মহাখালী নিউ ডিওএইচএসস্থ মসজিদে নামাজে জানাজা। এরপর সকাল ১১-৩০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, বাদ জোহর (১-৩০ মি:) নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা এবং শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল ৯-০০টায় গাজীপুরস্থ রাজবাড়ী মাঠ, সকাল ১০-৩০টায় কাপাসিয়াস্থ পাইলট স্কুল মাঠ, বাদ জুমা-কাপাসিয়ার ঘাগুটিয়া চালাবাজার হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন।
হান্নান শাহ-এর মৃত্যু সংবাদ জানার পর তার স্ত্রী নাহিন হান্নান অচেতন হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিয়েছেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী নাহিদ হান্নান, দুই ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান, শাহ রিয়াজুল হান্নান ও এক মেয়ে শারমিন হান্নান কে রেখে গেছেন। বাবার মৃত্যু সংবাদ জানার পর তার বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সারাজীবন উনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তার জন্য আমরা মানুষের কাছে দোয়া চাই।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহচর দলের সিনিয়র নেতা হান্নান শাহ-এর মৃত্যু সংবাদ জানার পর সকাল ৯টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যান মরহুমের মহাখালী ডিওএইচএসের বাসভবনে। শোকাগ্রস্ত বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার এই হঠাৎ করে চলে যাওয়া আমাদের সবার কাছেই একেবারে আকস্মিক ঘটনা। হান্নান শাহ-এর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। তিনি অকুতোভয় সাহসী দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এখন তার চলে যাওয়াটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটা বড় রকমের অভাব সৃষ্টি করলো। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হান্নান শাহ-এর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে তার বাসভবনে যান।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন : এইচ এম এরশাদ সরকার হান্নান শাহকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। তিনি সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (এপিডি) ও বিএডিসির চেয়ারম্যানও ছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিএডিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। রাজনৈতিক জীবনে শুরুতে ১৯৮৩ সালে তিনি মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) এবং ১৯৯৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্ব পালন করে।
সামরিক জীবন : বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী হান্নান শাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিগ্রেড কমান্ডার, চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমির কমান্ডেন্ট, যশোর ‘স্কুল অব ইনফ্রেন্টি অ্যান্ড টেকটিক্স’-এর চিফ ইন্সট্রাক্টর,পাকিস্তানের কোয়েটার আর্মি কলেজ অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইন্সট্রাক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন