রাজতন্ত্রের গণতান্ত্রিক কানাডায় রাজপরিবারের সফর
মাহাম্মদ আলী বোখারী * টরন্টো থেকে
২০০৯ সালের জুলাইয়ে কানাডার জাতীয় ম্যাগাজিন ‘ম্যাকলিন্স’-এ ‘কুইন কস্ট আস মোর দ্যান দ্য ব্রিটস পে’ অর্থাৎ ব্রিটেনের তুলনায় রানীকে আমরা বেশি খরচ জোগাচ্ছি’ শিরোনামের নিবন্ধে ক্যাটি অ্যাঞ্জেলহার্ট লিখেছেন- গত এক দশকে রানীর সাম্রাজ্য চালাতে কানাডার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। বলতে গেলে মাথাপিছু সে খরচ এককাপ কফি অর্থাৎ ১ ডলার ৫৩ সেন্টসের সমপরিমাণ, যা বাংলাদেশি টাকায় বর্তমানে ৯০ টাকা ৮৮ পয়সা। তাতে ২০১৫ সালের জরিপ অনুসারে বছরে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ জনগোষ্ঠীর কানাডাকে দিতে হয় বাংলাদেশি ৩২৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮ টাকা।
বিরাট অংকই বটে! তথাপি ঐতিহাসিকভাবে ১৫৩৪ সালে ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রাসোয়া আজকের ভৌগোলিক কানাডাকে দাবির সময়কাল থেকেই রাজতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতায় কানাডা চলছে এবং এটির উন্নয়নে যৌথভাবে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই রাজতন্ত্রে ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কানাডার প্রথম গোড়াপত্তন, তারপর স্বাধীন ‘ডোমিনিয়ন’ বা স্বায়ত্তশাসিত আধিপত্য এবং বর্তমানে পরিপূর্ণ এক স্বাধীন জাতি। তা সত্ত্বেও কানাডার পার্লামেন্ট ও গণতন্ত্রে রাজতন্ত্র গভীরভাবে প্রোথিত এবং আইনের শাসন ও বাক-স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এ রাজতন্ত্রটি রাষ্ট্র ও সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের একাত্মতার নীতিমালাকে ধারাবাহিকভাবে অটুট রেখেছে। তাতে রাজতন্ত্র সরকারের তিনটি কাঠামোর প্রধান হিসেবে বিবেচ্য, যেমন- নির্বাহী পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন প্রধান পরামর্শদাতা, সংসদীয় পর্যায়ে সিনেট ও হাউস অব কমন্স পরিচালিত পার্লামেন্টের তিনটি উপযোগের একটি এবং বিচারিক পর্যায়ে যেহেতু কোর্টের প্রতিটি রায়ই ক্রাউন বা রানীর নামে দেওয়া হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও ঔপনিবেশিকতা থেকে জাতিতে অভ্যুদয়ের কারণে সাংবিধানিকভাবে কানাডার রাজতন্ত্র তাৎপর্যপূর্ণভাবে পরিবর্তন সাধনে সক্ষম। এটির সিনেট ও সেলুন ডি লা ফ্রাঙ্কোফোনি কক্ষে রাজা ও রানীর ছবি দৃশ্যমান, যাদের নামে আইন প্রচলিত এবং সে ধারাটিই অব্যাহত থাকবে।
সেই কানাডায়ই গত শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো আট দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন ব্রিটেন থেকে রাজপরিবারের ‘ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব ক্যামব্রিজ’ যথাক্রমে প্রিন্স উইলিয়াম (উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইস) ও প্রিন্সেস ক্যাট মিডলটন (ক্যাথরিন এলিজাবেথ মাউন্টব্যাটন-উইন্ডসর) এবং প্রথমবারের মতো তাদের দুই সন্তান প্রিন্স জর্জ (জর্জ আলেকজান্ডার লুইস) ও প্রিন্সেস শার্লট (শার্লট এলিজাবেথ ডায়ানা)। তারা অবতরণ করেছেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের রাজধানী ভ্যাঙ্কুভারে কানাডার রাষ্ট্রীয় এক প্লেনে। রাজকীয় অতিথিরা এ ভ্রমণে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ইউকোন প্রদেশের নানা দর্শনীয় স্থানে যাবেন, যা তারা আগে যাননি। তাদের অবতরণের পর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রাদেশিক সংসদ চত্বরে এক জনসমাবেশে বিপুল অভ্যর্থনা জানান হয়। এতে কানাডায় রানীর প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টন ও তার পতœী শ্যারন জনস্টন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার পতœী গ্রেগরি সোফি ট্রুডো এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের প্রিমিয়ার ক্রিস্টি ক্লার্ক অভ্যর্থনা জানান। এ বছর রাজকীয় অতিথিদের সফরটি এমন সময়ে ঘটছে, যখন আগামী বছর পহেলা জুলাই কানাডা তার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে। সে জন্য বিমোহিত প্রিন্স উইলিয়াম সংবর্ধনায় বলেছেন, ‘আগামী প্রজন্ম আরও শত বছরের রাজকীয়তাকে বরণ করে নেবে’।
একইভাবে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লিখেছেনÑ ‘উই কুড নট হ্যাভ আস্কড ফর এ ওয়ার্মার কানাডিয়ান ওয়েলকাম ফর রয়েল গেস্টস’, অর্থাৎ রাজকীয় অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় কানাডিয়ানদের বলার প্রয়োজন পড়েনি। তবে দ্বিতীয় দিনের সফরে ভ্যাঙ্কুভারের একটি অভিবাসন কেন্দ্রের উদ্বোধনীতে কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা লিখিত ব্যানার এবং টিন ফয়েল ও কাঠের তৈরি ‘গিলোটিন’ বা শিরোñেদ যন্ত্র হাতে সেøাগান দিয়েছে- ‘নো কিংস, নো ল্যান্ডলর্ডস’!
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স