প্রায় সব জরিপেই এগিয়ে হিলারি
মমিনুল ইসলাম: সোমবার শেষ হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক। এখন হিসাব-নিকাশ চলছে কে বিজয়ী হয়েছেনÑ এ বিতর্কে? বিতর্ক পরবর্তী প্রায় সব জরিপ বলছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
আমেরিকার রাজনৈতিক-সাংবাদিক সংগঠন ‘পলিটিকো’র জরিপে হিলারিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে বিজয়ী হতে দেখা গেছে। বিতর্ক পরবর্তী জরিপ বলছে, দুই দলের ভোটারদের গড় প্রায় ৮০ ভাগ মনে করেন, প্রথম বিতর্কে হিলারি বিজয়ী হয়েছেন।
বিভিন্ন রাজ্যে পরিচালিত এ জরিপে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রায় সমান সংখ্যা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। উত্তরদাতাদের সর্বোপরি ৮০ ভাগ বলছেন, বিতর্কে হিলারি উত্তমভাবেই জবাব দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ডেমোক্রেট দলের ৯৯ ভাগ ও রিপাবলিকানের ৫৭ ভাগ ভোটার এমনটি মনে করেন।
বিতর্ক পরবর্তী এ জরিপ পরিচালনা করেছের বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত পলিটিকোর কর্মীরা।
বিতর্কের পর সিএনএন/ওআরসির প্রকাশ করা এক জরিপে বলা হয়, ৬২ শতাংশ মনে করেন হিলারি জয়ী হয়েছেন। আর মাত্র ২৭ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। যারা সরাসরি বিতর্কটি দেখেছেন, টেলিফোনে তাদের সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে এ জরিপ সম্পন্ন হয়।
সরাসরি বিতর্ক উপভোগকারী রেজিস্টার্ড ভোটারদের মধ্যে ৫২১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। সিএনএন/ওআরসির হিসেব অনুযায়ী, জরিপের ফলাফলে ৪.৫ শতাংশ ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতে পারে। এই জরিপে নির্বিচারী নমুনায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ মার্কিনি হিলারিকে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি উপযুক্ত প্রার্থী মনে করেন। বিপরীতে ট্রাম্পকে বেশি যোগ্য মনে করেন ৩৫ শতাংশ ভোটার। আর শক্তিশালী নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নেও হিলারিকে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। ৩৯ শতাংশ ভোটার যেখানে ট্রাম্পের শক্তিশালী নেত্বত্বে আস্থার কথা জানিয়েছেন, সেখানে হিলারির প্রতি আস্থা রেখেছেন ৫৬ শতাংশ ভোটার।
পাবলিক পলিসি পোলিংয়ের জরিপে ৫১ শতাংশ মানুষ বলেছে বিতর্কে জয় পেয়েছেন হিলারি। ৪০ শতাংশের মতে, ট্রাম্প জিতেছেন, যেখানে ৯ শতাংশ সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। তবে সিএনবিসিরর করা অনানুষ্ঠানিক জরিপে দেখা যায় ৬১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন যেখানে ৩৯ শতাংশ সমর্থন করছেন হিলারিকে।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নিউইয়র্কে শুরু হওয়া ৯০ মিনিটের এই বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করছেন এনবিসি টিভির উপস্থাপক লেস্টর হল্ট। ইতিহাসে রেকর্ড করে ১০ কোটি লোক এ বিতর্ক দেখেছেন।
এদিকে ক্লিনটন এবং ট্রাম্পের লড়াইটা শেষ পর্যন্ত সমানে সমানে ঠেকবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মতামত-জরিপ বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইভ থার্টি এইট। প্রতিষ্ঠানটির এডিটর ইন চিফ ও শীর্ষস্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষক নেট সিলভারের মতে, শেষ পর্যন্ত কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তা যথার্থভাবে বলাটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফাইভ থার্টি এইটের নতুন জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সম্ভাবনা ৪৮.৫ শতাংশ। আর সেই সম্ভাবনার দিক দিয়ে সামান্যই এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৫১.৫ শতাংশ। ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে যথার্থ নির্বাচনি আভাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করা ফাইভ থার্টি এইট।
জরিপে ট্রাম্প অবশ্য একটি ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে আক্রমণেই বেশি সময় ব্যয় করার প্রশ্নে হিলারির চেয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। কে বেশি আক্রমণকারী সেই প্রশ্নে ৩৩ শতাংশ মার্কিনি হিলারির কথা বলেছেন। যেখানে ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছেন ৫৬ শতাংশ ভোটার।
নির্বাচনি বিতর্কটি নিয়ে রেজিস্টার্ড ভোটাররা বলেছেন, ট্রাম্পের চেয়ে নিজস্ব মতামত অনেক যথাযথ ও স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন হিলারি। তারা মনে করেন, নির্বাচনি ইস্যুগুলোয় ট্রাম্পের চেয়ে হিলারির বোঝাপড়া অনেক স্বচ্ছ। প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতার প্রশ্নেও এগিয়ে রয়েছেন হিলারি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসংক্রান্ত বিতর্কে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রতি সঞ্চালকের পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। ট্রাম্প শিবিরের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান খবরটি নিশ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত প্রথম ওই বিতর্কে উঠে আসে বর্ণবাদ, যুদ্ধ, পররাষ্ট্রনীতি ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের ইতিহাসে ‘সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিতর্ক’ বলেও উল্লে করা হচ্ছে। সম্পাদনা: আবু সাইদ