‘একজন মোস্ট ওয়ান্টেড ফারুক হতে পারে’
আনিসুর রহমান তপন : কলকাতায় আটক জেএমবি সদস্য ফারুক বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড ফারুক হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুনেছি কলকাতার গোয়েন্দারা জেএমবির ৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড ফারুক নামের একজন আছে। যদি সেই ফারুকই হয়ে থাকে এটা আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপুর্ণ খবর। তবে যতটুকু জেনেছি এই ফারুকই, সেই ফারুক। এই ফারুক ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনতাই হওয়া আসামি। সে সময় তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে সরকার। তিনি বলেন, যদি এই ফারুকই সেই ফারুক হয় তাহলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে না। কারণ ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে একটি চুক্তি করা আছে। মন্ত্রী বলেন, আর কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া বাকি দুই জনের পরিচয় সম্পর্কে আমরা এখনও অফিসিয়ালি কিছু জানি না। এটি অফিসিয়ালি নিশ্চিত হতে আরও দুই একদিন সময় লাগবে। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম রাজ্যের আইজল থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে এনাম ওরফে কালো ভাই, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জবিরুল, মো. রফিকুল ওরফে মো. রুবেল ওরফে পিচ্চি, শহিদুল ইসলাম ওরফে সুরয়ে ওরফে শামীম এবং আবুল কালাম ওরফে করিম নামের ছয় জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এদের মধ্যে রুবেল, জাহিদুল এবং আনোয়ার হোসেন ফারুক বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানিয়েছে এসটিএফ। ২০১৪ সালের পর থেকে এসব জঙ্গিরা পলাতক ছিল।
বৈঠক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিমা তৈরি, স্থাপন এবং বিসর্জন পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে ম-প ও উৎসব স্থলের আশপাশে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপর কমিটি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আনসার ও পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটির নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে। বিজিবি প্রস্তুত থাকবে, প্রয়োজনে তাদেরও ব্যবহার করা হবে। আমরা আশা করছি, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে পারবে হিন্দু সম্প্রদায়। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের আমলে শান্তিপূর্ণ ও যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ায় দেশে উত্তোরোত্তর পূজা ম-পের সংখ্যা বাড়ছে। এটা ধর্মীয় সম্প্রতির উদাহরণ। এরই ধারাবাহিকতায় গতবারের চেয়ে এবার সারাদেশে এবার প্রায় ৩০০টি বেশি পূজা ম-পে উৎসব পালন করবে হিন্দু সম্প্রদায়। তিনি বলেন, উৎসবে যেন রাস্তায় যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে। আসাদুজ্জামান খান বলেন, এছাড়া একই সময়ে মুসলিম ধর্মের শিয়া গোষ্ঠী পালন করবে মহররমের আশুরা। এটি ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকায় যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ থাকবে। তবে এ দুই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেনো কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য এর আগে উভয় গোষ্ঠীর নেতারা আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে উৎসব পালনে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম