পুলিশ ও গোয়েন্দারা তাদের খুঁজছিল
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: ভারতে গ্রেফতার ছয় জঙ্গির মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে ভারত যাদের দাবি করেছে তারা তিনজনই বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। তারা হলেনÑ আনোয়ার, রুবেল, কালাম। তাদের একাধিক নাম রয়েছে। বাংলাদেশে তারা এক নামে পরিচিত। ভারতে গিয়ে পরিচিত হয়েছে আরেক নামে। যে কারণে তারা গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সময় নিয়েছে। এখন বাংলাদেশ তাদের কাছে থাকা তথ্যর সঙ্গে কলকাতার পুলিশের দেওয়া তথ্য মিলেয়ে দেখেছে। ইতোমধ্যে কলকাতার পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এরপর তারা তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের অনেক দিন ধরেই গোয়েন্দারা খুঁজছে। তবে তারা সর্বশেষ কোথায় অবস্থান করছেন, তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছিল না। এ কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু গোয়েন্দারা তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছিল। ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত গোয়েন্দারা জানতে পারেনি তারা ভারতে পালিয়ে গেছে এবং সেখানে জঙ্গিহামলার পরিকল্পনা করছে। কারণ জঙ্গিরা সাধারণ কোনো যাত্রীর মতো সেখানে যায়নি। তারা তথ্য পেয়েছেন, জঙ্গিরা সীমান্ত পথে সেখানে পালিয়ে গেছে। পুলিশের কাছেও তিনজঙ্গির ব্যাপারে তথ্য রয়েছে। তারাও তাদেরকে খুঁজছে বলে দাবি করেছে কলকাতার পুলিশ।
বাংলাদেশে জঙ্গি দমনের বিষয়ে কাজ করে এমন একটি বিশেষ সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ভারতে যাদের জেএমবির নেতা বলে গ্রেফতার করা হয়েছে এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালো ভাই, জেএমবির সূরা কমিটির সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা। জঙ্গি কর্মকা- পরিচালনায় বেশ কয়েকবছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার বাড়ি জামালপুরে। তিনি গোয়েন্দাদের কাছে ছিল মোস্ট ওয়ানটেড জঙ্গিদের একজন। কলকাতা পুলিশের দাবি বর্তমানে আনোয়ার হুসেন ফারুক জেএমবির বাংলার সংগঠনের মূল মাথা। বাংলার সংগঠনের অর্থনৈতিক বিষয়টা দেখে আনোয়ার। এর খোঁজ করছিল বাংলাদেশ পুলিশও। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খতিয়ে দেখা হচ্ছে আনোয়ার হোসেন কবে সেখানে গেছেন। তার আর কি কি কানেকশন রয়েছে। তারা বাংলাদেশে কোনো হামলার পরিকল্পনা করেছিল কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যার নাম ফারুক হিসাবে জানা গেছে, সেই ফারুক আমাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। কলকাতায় ধরা পড়া ব্যক্তি ২০১৪ সালে প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার যে ঘটনা ঘটেছিল ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে তার হোতা ছিল ফারুক। তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও হয়েছে। পুরস্কারও ঘোষণা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত মো. রফিক ওরফে রুবেল ওরফে রাসেল ওরফে পিচ্চি জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য। মহম্মদ রুবেলও বাংলাদেশের জামালপুরের বাসিন্দা। বাংলাদেশের নেতাদের ভারতে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল রুবেলের উপর। ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরিতে তুখোড় এ বাংলাদেশি। তিনি বিভিন্ন জনের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করতো।
এছাড়াও গ্রেফতার আবুল কালাম ওরফে কলিমও বাংলাদেশি ও জেএমবির সক্রিয় সদস্য তার বাড়ি আসামের বারপেটায় বলে দাবি করে কলকাতা পুলিশ। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছে কালাম বাংলাদেশি। সেও বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেড। ভারত গিয়ে তিনি আসামে বাড়ি কিনেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরিতে ওস্তাদ কালাম। তাকে খোঁজ করছিল এনআএ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ তিনজনকে অনেকদিন ধরেই খোঁজা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে জঙ্গি অভিযানের সংখ্যা বাড়ায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং গোয়েন্দারা তৎপর হওয়ার পর তারা সেখানে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের তিনজনের ব্যাপারে আরও খোঁজখবর করা হচ্ছে। দুই দেশের জঙ্গিরা মিলে কোথায় কোথায় হামলা করতে চেয়েছিল ভারতের গোয়েন্দাদের কাছে তা জানতে চেয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম