চুক্তি অনুষ্ঠানে ক্ষমা চাইলেন কলোম্বিয়ার ফার্ক বিদ্রোহী নেতা
মমিনুল ইসলাম: কলম্বিয়ায় প্রায় ৫২ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার সেদেশের ফার্ক বিদ্রোহীদের সাথে সরকারের এক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশটির দীর্ঘ সশস্ত্র সংঘাতে যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিদ্রোহী গ্রুপটির নেতা। সূত্র: বিবিসি।
শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস এবং ফার্ক বিদ্রোহীদের প্রধান তিমোচেংকো বা তিমোলিওন হিমেনেস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কাটাগেনায় এক আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে চুক্তি সই হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই শান্তির প্রতীক সাদা পোশাক পরে আসেন। যে কলম দিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেটি বুলেট দিয়ে তৈরি। এ উপলক্ষ্যে কার্টাগেনায় সারাদিন ধরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চুক্তির সময় বাঁধ ভাঙা উল্লাস প্রকাশ করেছেন উপস্থিত জনতা।
ফার্ক নেতা তিমোলিওন বলেন, যুদ্ধের সময় আমাদের কর্মকা-ে যারা ভুক্তভোগী হয়েছে আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। অনুষ্ঠানে তিনি যখন ক্ষমা চান এতে উল্লাস প্রকাশ করেন উপস্থিত অতীথিরা। অনেকে এসময় চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যা আমরাও পারি!’ এসময় ফার্ক সদস্যরা ও লেটিন আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধানরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা ক্ষমা চাওয়ায় অভিনন্দন জানান।
দীর্ঘ ৫২ বছরের এই সশস্ত্র সংঘাতের অবসানের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতা ও অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতে বিশাল পর্দাতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া ফার্কের কিছু সংখ্যক ক্যাম্পে দলটির জড়ো হওয়া বিদ্রোহীদের দৃশ্যও সম্প্রচার করা হয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট স্যান্তোস বলেন, এ ঐতিহাসিক মুহূর্ত কলম্বিয়া বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তা হল- ‘আর যুদ্ধ নয়”। এসময় সবাই এ বাক্যটি দিয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দেন।
এই প্রথম তিমোলিওন টিভিতে জাতির উদ্দেশ্যে সরাসরি ভাষণ দিলেন। তিনি অঙ্গীকার করেন, ফার্ক তাদের বন্দুক সমর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানে বেশি বেশি ক্ষমা চান তিনি।
দীর্ঘ ৫২ বছরের এই সশস্ত্র সংঘাতে আনুমানিক ২ লাখ ৬০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়, আর বাস্তুচ্যুত হন ৬০ লাখেরও বেশি লোক। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সশস্ত্র সংঘাতে নিহতদের স্বরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চান দুইনেতা।
এ অনুষ্ঠানে আড়াই হাজার অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, এবং কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রো। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি