‘গরু’ ও ‘যুদ্ধ’বিষয়ক জটিলতা
কাকন রেজা
যারা যুদ্ধ হবে ধরেই নিয়েছেন, দুদিকের নানা হিসাব কষছেন, গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দেওয়ার মতো লাভ ক্ষতির ‘খেরোনামা’ খুলছেন, তাদের হয়তো আখেরে খুব একটা লাভ হবে না। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকরা নিজেদের দিকটা ভালোই বোঝেন। কারণ তারা ‘পাগল’ নন। যদিও বিবিসিসহ খ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলো ‘যুদ্ধ’ সম্ভাবনা ও আশংকা নিয়ে খবর করেছে। তবে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’ এর মতো কোনো আত্মঘাতী বিষয়ে দুটি দেশ হয়তো এত সহজে জড়াবে না।
বরং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের যুদ্ধটা হবে অন্য কৌশলে। প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে নয়, যুদ্ধ হবে কুটনীতির ‘অস্ত্র’ প্রয়োগে। উরির সংঘটিত ঘটনাকে ইস্যু করে কুটনৈতিক যুদ্ধে কে কতটা ফায়দা নিতে পারে সে খেলাই চলবে এখন। ভারত চেষ্টা করবে পাকিস্তানকে সারাবিশ্ব থেকে একঘরে করতে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রয়োজনে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে ‘সার্ক’র বিকল্পে নিজ মিত্র সহযোগে বিকল্প জোট গড়তে। হয়তো সে লক্ষ্যে ইসলামাবাদে আসন্ন সার্ক সম্মেলনকে অকার্যকর করার প্রচেষ্টাও হতে পারে। এর বিপরীতে পাকিস্তান চাইবে তার মিত্র চীন এবং প্রয়োজনে রাশিয়ার সহায়তায় শক্তির নতুন বলয় গড়তে। কাশ্মীর প্রশ্নে ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর সহানুভূতি আদায় করতে। রাজনীতিতে যেহেতু স্থানীয় মিত্র বা শত্রু কেউ নেই সুতরাং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ধারায় এসব চিন্তা খুব অমূলক কিছু নয়। কিন্তু আপাত এ নিয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের আশংকাটি খুব পরিণত চিন্তাপ্রসূত বলে মনে হয় না। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত যুদ্ধের ধারণাটা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘ডু অর ডাই’ এর মতো অবস্থা না ঘটলে যুদ্ধ চলে অন্য ধাচে, অন্য প্রক্রিয়ায়।
হয়তো সেই অন্য প্রক্রিয়াতেই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হবে। হয়তো যতই বেলা যাবে ‘ফ্যান ফলোয়ার’ বাদে অন্যরা সেই খেলার দর্শক হবেন। বুদ্ধিমান দর্শকদের কেউ কেউ বাজিকরও হতে পারেন। হয়তো অনেকে কোচের মতো মাঠের বাইরে বসে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে চিয়ারগার্লসও থাকতে পারে। থাকতে পারে ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’র মতো আম্পায়ারও। এমন সব ‘হয়তো’র ফেরে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের মতো স্ট্রাগলারদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিইবা করার আছে। (শেষ)
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট / সম্পাদনা: আশিক রহমান