সবই পেয়েছেন তিনি
তসলিমা নাসরিন
সৈয়দ শামসুল হক মারা গেছেন ৮১ বছর বয়সে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মান-সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রচার, জনপ্রিয়তা, সরকারি-বেসরকারি পুরস্কারÑ সবই পেয়েছেন তিনি। একজন লেখকের যা যা কাক্সিক্ষত থাকতে পারে, তা পাওয়া হয়ে গেলে তাকে সফল বা স্বার্থক লেখকই বলা যায়। সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আটের দশকের শেষদিকে ভালো যোগাযোগ ছিল আমার। মাঝে মধ্যে ময়মনসিংহে গেলে আমার সঙ্গে দেখা করতেন। একবার আমার সাহিত্য সংগঠন ‘সকাল কবিতা পরিষদ’-এর অনুষ্ঠানে তাকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি গিয়েছিলেন। ভালো বক্তৃতা করেছিলেন। সে সময় আমার সাহিত্যচর্চার বেশ খবর নিতেন তিনি। আমার লেখা কবিতাগুলো মন দিয়ে পড়তেন, মন্তব্য করতেন। ত্রিশ বছরের বড় ছিলেন, আমাকে কন্যার মতো স্নেহ করেন বলতেন।
‘খেলারাম খেলে যা’র বিখ্যাত লেখকের সঙ্গে একসময় যোগাযোগ সম্পূর্ণই বন্ধ করে দিই। সে অনেক গল্প। ‘ক’ বইটিতে সেইসব ভালো-মন্দের স্মৃতি অনেকটাই আছে।
আজ তিনি চলে গেলেন, কাল আমরা যাব। জীবনের এই তো নিয়ম। এক এক করে আমাদের সবাইকে যেতে হবে। আমাদের মধ্যে কজন আশি পার করে যেতে পারব সেটাই প্রশ্ন। এখন যে জরুরি বিষয়টি আমি জানতে ইচ্ছুক সেটি হলো, তিনি যে ঢাকা হাইকোর্টকে দিয়ে ‘ক’ বইটিকে নিষিদ্ধ করিয়েছিলেন, সেটির কী হবে? বারো বছর পার হয়ে গেছে, এখনও কি বইটি নিষিদ্ধ রয়ে যাবে? নাকি বাদির অনুপস্থিতিতে বইটি এখন মুক্তির স্বাদ পেতে পারে? ‘ক’ বইটি লিখেছি বলে সৈয়দ হক ১০০ কোটি টাকার মামলা করেছিলেন আমার বিরুদ্ধে। এই মামলাই বা কি অবস্থায় আছে কে জানে।
এটির কোনো শুনানি হয়েছে বলে শুনিনি। তিনি কি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছেন কাউকে? যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কি মামলা চালিয়ে যাবেন এবং বইটি নিষিদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করবেন?
মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে গত তিন দশক লড়ছি। মনে হচ্ছে, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়তে হবে।
লেখক: নির্বাসিত লেখিকা