মেলানিয়াকে আক্রমণ কি নারী অসম্মান নয়?
লিহান লিমা: নারীদের সম্মান করতে পারেন না বলে বদনাম আছে রিপাবলিকান দলের মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু সবচাইতে মজার বিষয় হলো একসময় যারা ট্রাম্পের অপমানের শিকার হয়েছেন বা বর্তমানে যারা ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ তারা এখন ট্রাম্পকে আক্রমণ করতে গিয়ে ঘৃণ্য ইঙ্গিত করছেন মেলানিয়া ট্রাম্পের দিকে।
১৯৯৬ সালে বিশ্বসুন্দরী অ্যালিসিয়া ম্যাকাডোকে মিস শূকরী, মিস গৃহকর্মী, খাদক বলে অপমান করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেনেজুয়েলার এই নারী এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সেই অপমানজনক কথার বদলা নেওয়ার পূর্ণ সুযোগ আছে তার হাতে। এবং তিনি সেটি নিবেন, তার নেওয়া উচিত । নারীর প্রতি অসম্মানের জবাব তিনি দিতে পারেন তার মূলবান ভোট দিয়ে। কিন্তু মঙ্গলবার কসমোপলিটান ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অ্যালিসিয়া তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন ট্রাম্পপতœী মেলানিয়াকে। প্রশ্ন আসে, নারীর প্রতি অসম্মানের জবাব দিতে গিয়ে নিজেই একজন নারীকে অসম্মান করেছেন কিনা?
অ্যালিসিয়া মেলানিয়ার ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘রিপাবলিকান নমিনীর স্ত্রীর ইংরেজি উচ্চারণ মাপা-মাপা এবং প্রসাধনিক, আমি মনে করি আমি মেলানিয়ার চেয়ে ভালো ইংরেজি বলতে পারি’। যদিও ফ্রান্স, জার্মান, ইংরেজি, সেøাভানিয়ানসহ চারটি ভাষায় পারদর্শী জন্মগতভাবে ¯েœাভানিয়ান মেলানিয়া। তার ইংরেজি উচ্চারণে বিদেশি টান আছে এবং সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
অ্যালিসিয়া আরও বলেন, ‘একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির স্ত্রী হিসেবে তিনি ব্যর্থও। তিনি তার আশপাশের মানুষকে অনেক সাহায্য করতে পারতেন যা তিনি করতে পারেননি।’ কিন্তু আমরা সবাই জানি যে , ট্রাম্পের অর্ধাঙ্গিনীর তকমা থেকে বেরিয়ে মেলানিয়া নিজেকে পরিচয় করিয়েছেন নারী ব্যবসায়ী ও সফল মডেল হিসেবে। অ্যালিসিয়া বলেছেন, ‘তাকে দেখে মনে হয় তিনি একটি পুতুল, প্রসাধনিতে ভরা।’ যদিও দুজনেই ছিলেন সাবেক মডেল এবং অ্যালিসিয়ার এটি ভালো করেই জানার কথা যে, ভোগ, হার্পার বাজার, ওসান ড্রাইভ, অ্যাভিনিউ, ইন স্টাইল, নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন এবং ব্রিটিশ জিকিউ বিশ্বখ্যাত সব ম্যাগাজিনের কাভার গার্ল হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মেলানিয়া।
শুধু অ্যালিসিয়া নন, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হয়েছেন মেলানিয়া ট্রাম্প। টেড ক্রুজ শিবির মেলানিয়ার নগ্ন ছবি ব্যবহার করে বলেছে, ‘ইনি আপনাদের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।’ এছাড়া ট্রাম্পকে আক্রমণ করতে গিয়ে দ্য ডেইলি মেইল, পলিটিকোসহ বেশ গণমাধ্যম মেলানিয়াকে তুলে ধরেছে ‘পতিতা, রক্ষিতা’ হিসেবে। নিউইয়র্ক পোস্টতো মেলানিয়ার নগ্নতার প্রচারণায় নেমেছিল। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এনবিসির জনপ্রিয় কমেডি অনুষ্ঠান স্যাটার ডে নাইট লাইভ-এ মেলানিয়াকে স্ত্রী নয়, বরং ট্রাম্পের মেয়ে বলে কৌতুক করা হয়েছে।
মূল কথা হলো, ট্রাম্পের বিরোধিতায় মেলানিয়ার নগ্নতাকে আক্রমণ কি আদৌ সম্মানজনক। ট্রাম্পকে কাবু করতে মেলানিয়ার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে টান-হেচড়াঁ করে ট্রাম্প প্রতিপক্ষরাও উদার পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো কিভাবে নারীকে সম্মান করছেন সেটিই ভাববার বিষয়। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি