পাকিস্তান কি তবে বিচ্ছিন্ন?
নূসরাত জাহান: উরি হামালার পর ভারতে সরকারের ধীর পদক্ষেপে অনেকেই বিশেষ করে ভারতের নাগরিকরাই বিরক্ত ছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে ধরেই নিয়েছিল মোদি সরকার এবারও হয়তো কিছুই করবে না। তাদের হাতে মোক্ষম অস্ত্র থাকার পর শুধু কূটনীতিক পথে হাঁটা ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছিল না। তবে মোদি সরকারের সেই ধীর পদক্ষেপ একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে এখন। ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে পাকিস্তান। সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা না হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একে একে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে পাকিস্তান। সবশেষ সংযোজন হলো ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন স্থগিত। ভারত সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ঘোষণার পর একে একে বাংলাদেশ, ভুটান ও আফগানিস্তানে সার্ক সম্মেলনে যোগ দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে পাকিস্তান। আর এর পিছনে কাজ করেছে নরেন্দ্র মোদির কৌশলী পদক্ষেপ।
উরি হামলার পর প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাবে ভারত। কিন্তু মোদি সরকার তা করেনি। এরপর ভাবা হয়েছিল সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি বাতিল করবে। তাও হয়নি। হাজার হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে সভ্যতার প্রথম অঙ্কুরটা মাথা তুলেছিল যে নদের অববাহিকায়, সেই নদের প্রবাহ শুকিয়ে যাক ভারতবাসীও হয়তো তা চায়নি। সিন্ধু চুক্তি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে ঠিকই। মোদিকে দৃঢ় কণ্ঠে বলতে শোনা গেছে, ‘পানি আর রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। আমি পাকিস্তানকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই ভারত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। যদি তোমাদের শক্তি থাকে তাহলে এগিয়ে আস। যুদ্ধ করে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে। দেখা যাক কারা জয়ী হয়। কারা আগে দেশ থেকে দারিদ্র্যতা ও অশিক্ষা দূর করতে পারে।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অন্য কোনো পথ খুঁজছেন মোদি। সার্কই হয়তো মোদির সেই হাতিয়ার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত তার বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সৌজন্য দেখিয়ে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করেনি। প্রবাহ রুখে দেয়নি নদীর। আর এর সুবাদে হয়তো এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছে এ চুক্তি। কিন্তু সন্ত্রাসে রক্তে রঞ্জিত ভারত যদি আজ যাবতীয় মূল্যবোধ, সৌজন্য, মানবিক অনুভূতি দূরে সরিয়ে রাখে, তা হলে পাকিস্তানের কী হবে?
পানিতে না মারলেও কূটনীতিকভাবে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে চাইছে ভারত। বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। যাতে করে তারা তাদের কৃত কর্মের ফল ভোগ করতে পারে। একে তো কোণঠাসা পাকিস্তান এবার বন্ধুহীনও হয়ে পড়ছে তারা। নিঃসঙ্গতার ঘেরাটোপে আজ ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নওয়াজ শরিফের প্রধান কূটনৈতিক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজও যেন আজ বিধ্বস্ত। সিন্ধু চুক্তি থেকে ভারত একতরফাভাবে সরে যেতে পারে না কিছুতেই এটুকুই বললেন সরতাজ। এভাবে চুক্তিভঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর এটুকু বলেই ক্ষ্যান্ত দিলেন। কিন্তু নামান্তরের সেই যুদ্ধ যদি ভারত শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেই দেয়, তাহলে কী হবে? কোন পথে মোকাবিলা করবে পাকিস্তান? সরতাজ আজিজ বা নওয়াজ শরিফ কারও কাছেই এর উত্তর নেই। এরই মধ্যে একে একে সরে যাচ্ছে মিত্ররা। সরে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো।
দীর্ঘদিনের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রও এখন পামে নেই পাকিস্তানের। গোটা ইউরোপ তাদের বিরুদ্ধে। ইসলামি বিশ্ব পাশে দাঁড়াবে বলে নওয়াজ শরিফরা আশা করেছিলেন। কিন্তু ইসলামাবাদের হাতে সন্ত্রাসের খড়গটা এতই প্রকাশ্যে যেকোনো বিবেচক রাষ্ট্রই পাকিস্তানের হয়ে সরব হতে চায় না। নওয়াজদের শেষ আশা ছিল চীন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কোনো ইচ্ছাই নেই বেইজিংয়ের। সেটা তারা বেশ স্পষ্ট করেই পাকিস্তানকে বলে দিয়েছে।
একে একে সরে যাচ্ছে সব বন্ধু। অতএব, অসীম নিঃসঙ্গতাই ভবিতব্য পাকিস্তানের। পরিস্থিতি যেন আজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যে জঙ্গি দিয়ে ভারতকে শায়েস্তা করবে ভেবেছিল। সেই হাতিয়ারে আজ তারা নিজেরাই বিদ্ধ। আর ফলাফল হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা। সূত্র : বিবিসি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম