ভ্রাতৃত্ববন্ধন ইসলামের অনুপম শিক্ষা
মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত
ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম। স্বভাবজাত ধর্ম। মানবতার ধর্ম। মুক্তির ধর্ম। ইসলাম মানবকল্যাণের একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম মানুষকে শেখায় উত্তম আদর্শ। শেখায় মানবসেবা। মানবতা, উদারতা আর সামাজিকতা। শেখায় একতা-ঐক্যবদ্ধতা, ভ্রাতৃত্ববন্ধন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে মুমিনের ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা করে বলেন, নিঃসন্দেহে সমস্ত মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মিমাংসা কর। সুরা হুজরাত: ১০
হাদিসে রাসুল সা. ইরশাদ করেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। এই ভ্রাতৃত্ব জন্মসূত্রের নয়। ঈমানের দাবিতে। এই বন্ধন কালিমার। এই বন্ধন শান্তির। এই ভ্রাতৃত্ববন্ধনে নেই অর্থের মোহ। নেই পদ ও সম্পদের বিদ্বেষ। থাকবেনা হিংসা আর অহংকারের লেশ।
ইসলাম মানুষকে মূল্যায়ণ করতে শেখায়। শেখায় সম্মান দেখাতে। অবজ্ঞা অপমান উপহাস ইসলামে বরাবরের মতই ঘৃনিত। অবজ্ঞা উপহাসকে ইসলাম কোনভাবেই পশ্রয় দেয়না। করেনা সমর্থন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করে বলেন, অহংকার করে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করোনা। এবং জমিনে গর্বভরে পদচারণা করোনা। সুরা লুকমান: ১৮
যাকে অবজ্ঞা উপহাস করা হয়, তুচ্ছ তুল্য করা হয়; সে হয়তো বা আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক প্রিয় বান্দা। যা উপহাসকারি উপলব্দি করতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুমিনগণ কেউ যেন কাউকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কোন নারীও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। সুরা হুজরাত: ১১
দরিদ্র-অসুস্থ রোগীকে সমাজে উপহাস করা হয়। উপহাস করা হয় শারিরীক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধীকে। তুচ্ছ মনে করা হয় অপরাধী কিংবা পাপীকে। অথচ তারাও আল্লাহর বান্দা। সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি। সম্মানের পাত্র। মর্যাদার যোগ্য। তারাও মানুষ। আর ইসলাম মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করতে শিখিয়েছে। আল্লাহ মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলতে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেন, তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বল। সুরা বাকারা: ৮৩
আল্লাহ তায়ালা যে কোন মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলতে বলেছেন। চাই মুমিন হোক চাই কাফের। চাই শিক্ষিত চাই মূর্খ। ধনী কিংবা দরিদ্র। রাজা বা প্রজা। শত্রু মিত্র সবার সাথে উত্তমভাবে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ আল্লাহর। এ বাণী কুরআনের। এ শিক্ষা ইসলামের। এ আদর্শ প্রিয় রাসুলের। রাসুল সা. বলেছেন, যখন কারো সাথে কথা বলবে উত্তমভাবে বলবে। অন্যকে নিজের মন্দ হতে বাঁচাবে।
একজন মুসলমানের কাছে আরেকজন মুসলমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে। জান মালের নিরাপত্তা থাকবে । তার আঘাতমূলক কথা থেকেও থাকবে নিরাপদ। রাসুল সা. বলেন, প্রকৃত মুসলমান সে ব্যাক্তি যার হাত মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।
আমাদেরকে এমন মুমিন হতে হবে যার মাঝে থাকবে ভ্রাতৃত্ববোধ, একতা-সামাজিকতা উত্তম আদর্শ। থাকবে মুমিনের নিরাপত্তা। থাকবে মানুষের নিরাপত্তা। আল্লাহ সহায়!
লেখক: শিক্ষা সচিব, জামিয়াতুস সালাম ঢাকা।