আমাদের উন্নয়নে তিনটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে
হায়দার আকবর খান রনো
বাংলাদেশের যে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে, তাতে তিনটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে। একটি প্রবাসী শ্রমিক। প্রবাসী শ্রমিকেরা রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো সম্মান নেই। অথচ তারা বিদেশে দাসের মতো কাজ করেন। পোশাকশিল্প শ্রমিকেরা কঠোর শ্রম দিচ্ছেন, যার ফলে আমরা বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারছি। তার ফলেই এত আয় করছি, বিলাসিতা করছি, সেই পোশাকশ্রমিকেরা পৃথিবীর সবচেয়ে কম মজুরির শ্রমিক। এতে আমরা বাহাদুরি করি! চীনে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে, আর আমরা উল্লসিত হয়ে গেছি! আহা! কেন উল্লসিত? কারণ এখানে বিদেশি ক্রেতারা আসবেন। কম মজুরি পোশাক বানাতে পারব! এটা কোনো গর্বের কথা নয়, গৌরবও নয়, আনন্দের কথা নয়, এটা খুব লজ্জার কথা।
কৃষকেরা তাদের মেধা, পরিশ্রম দিয়ে উৎপাদন বাড়িয়েছে। সেখানে সরকারের অবদান খুবই কম। কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি মোটেও দেয় না। কৃষকেরা তার কৃষি পণ্যের দাম মোটেও পায় না, পায় মধ্যসত্বভোগীরা। কে বা কারা এই মধ্যসত্বভোগী? কে এই লুটপাটকারী? এসব তো দলের লোকজন। তাদের সামাল দিতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। দেনও না হয়তো। এতে করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লুটপাটে বিশ্বাস করে এরা। পুঁজিবাদী বিশ্বাসী দলটাই এরকম হয়ে গেছে। বিএনপিও ব্যতিক্রম নয়, একই। এসব দলের লোকজনকে রাখতে হলে তাদের লুটপাট করার সুযোগ দিতে হয়। তারা লুটপাট করবে।
যে দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। এখান থেকে বের হতে হলে পুরো সিস্টেমটাকে পরিবর্তন করতে হবে। আত্মসাতকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সমাজতন্ত্র অভিমুখী হতে হবে। আজকে কোথায় সমাজতন্ত্র? শিক্ষা, চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধুর আমলে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বেসরকারি স্কুলও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ভালো পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু আজকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতালও হচ্ছে। কিন্তু গরিব মানুষ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে কেউ যায় না। সরকারি হাসপাতালে গেলেও সুচিকিৎসা পায় না। চিকিৎসা পেতে হলে কি করতে হবে আপনাকে? বড় লোক হতে হবে। পয়সা থাকতে হবে। এমন যদি আমাদের ফিলোসফি তাহলে কিভাবে হবে? কিভাবে সমাজ থেকে বৈষম্য কমবে?
আজকে পার্লামেন্টে মেম্বার কারা? কোটি কোটি টাকার মালিকেরা। আগে তো এমন ছিল না। তখন জনগণ ও রাজনীতিবিদেরা মিলে কাজ করেছেন। তাদের দোষ-ক্রটি থাকতে পারে। কিন্তু এখন? এখন আমাদের টাকা হয়েছে। হুটহাট করে টাকা বানিয়েছি। এখন আমাদের মানসম্মান দরকার। ক্ষমতা আরও সংহত করা দরকার, সেজন্য আমাদের এমপি হতে হবে। এমপি হতে গেলে টাকা লাগে। টাকা দিয়ে আমরা এমপি পদ কিনি। এটা শুধু এই আমলেই নয়, সব আমলেই হয়।
পরিচিতি: সভাপতিম-লীর সদস্য, সিপিবি
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামতটি লিখেছেন আশিক রহমান