আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. অনুপম সেন শেখ হাসিনা এখনো পর্যন্ত যে সাড়ে বারো বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
শেখ হাসিনা তিন টার্মে এখনো পর্যন্ত যে সাড়ে ১২ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তার মধ্যে শেষ সাড়ে ৭ বছরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এই বাংলাদেশে, এ সময়ে মানুষ যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, তার কোনো তুলনা নেই।
তিনি বলেন, বলতে গেলে প্রায়ই প্রতিটি মানুষই দুবেলা খেতে পারছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক পথে, উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা বিশাল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেনÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. অনুপম সেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে, সমস্ত ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমরা জনগণের সেবকÑ এ কথাটি শেখ হাসিনা বারবার বলেন। কিন্তু এর আগে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের আচরণ ছিলÑ তারা জনগণের সেবক নন, প্রভু। তবে আমি এমনটি বলব না, আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি জনগণের উপর প্রভুর মতো আচরণ করেন না। হ্যাঁ করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার আচরণ লক্ষ্য করে দেখবেন, তিনি সবসময় জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করেন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেন।
ড. অনুপম সেন বলেন, শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছেন, আমাদের ক্ষমতায় থাকার বৈধতা হলো জনগণ। আমরা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন সাধন করব। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আসার জন্য খালেদা জিয়াকে আহ্বান করেছিলেন, মিলিতভাবে সংকটের মোকাবেলার কথা বলেছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে না বলেছিলেন। কারণ সংবিধানে লেখা আছে, যেকোনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে সব ক্ষমতা থাকতে পারবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখছি, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৮১ সালের মে মাসে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন, তখন থেকেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রকৃত অর্থে শুরু হলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় কয়েকবারই তাকে হত্যা চেষ্টা হলো। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা যখন সভা করছেন, সেখানে গুলি চালানো হলো। ২৩-২৪ জন সাধারণ মানুষ মারা গেল, অনেকেই আহত হলো। তখন থেকেই শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার আক্রমণ হলো। কিন্তু তিনি দমে যাননি। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর এই সদস্য বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেন, তখন তিনি পার্লামেন্টকে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতাবান করার জন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করলেন। সংসদীয় কমিটিগুলো ফাংশন করলে সংসদ এমনিতেই ফাংশন করে। কিন্তু পার্লামেন্টকে ফাংশন করার পিছনে একটা বড় ভূমিকা থাকে সংসদীয় কমিটির। এখন সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলো পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং মন্ত্রণালয়গুলো ত্রুটি-বিচ্যুতি মন্ত্রণালয়গুলো কিভাবে চলা উচিত, অনুচিত এসব দেখে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটির ভূমিকা বিরাট। এটাকে শক্তিশালী করলেন শেখ হাসিনাই। তিনি সংসদে প্রশ্ন-উত্তর পর্বও চালু করলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশে যে গণতন্ত্র চলেছে সেটি আসলে গণতন্ত্র নয়, সামরিক আমলাতান্ত্রিক শাসন। এটার রূপ বা স্বরূপটা অনেকটা পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্র শাসনের মতোই বলা যায়, নিরবিচ্ছিন্নভাবে শাসন করেছে। পাকিস্তানে সামান্য কয়েকবছর গণতান্ত্রিক শাসন এসেছিল, বেনজির-ভূট্টোর সময়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তাও তার মধ্যে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র ছিল না।
বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্র কখনোই সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন সেটা ছিল, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতা ভোগ করার কথা, স্বাধীন রাজনৈতিক সত্ত্বা হওয়ার কথা, সেটা হয়ে গিয়েছিল একটা ঔপনিবেশিক উপনিবেশ। সেই ঔপনিবেশকে শাসন করেছে পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক স্বৈরতন্ত্রে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও এদেশের মানুষের যে আন্দোলন, তা ছিল তার স্বাধীনতা পাওয়ার আন্দোলন। লাখো মানুষের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত না হতেই দেশে সামরিক স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হলো। সত্যিকার অর্থে সেখানে কখনো গণতন্ত্র ছিল না।
অনুলিখন: তানভীন ফাহাদ