তারা অন্ধ বিশ্বাসী, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যাকারী
রেভা. সুধীর হালদার
বাংলাদেশের সন্তান আমরা। শত সম্ভাবনা থাকলেও দারিদ্রসীমার নিচেই আমাদের বসবাস করতে হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের অজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক কারণে জীবনমান প্রত্যাশা মতো উন্নত হয়নি, দারিদ্রসীমার নিচে জীবনযাপন করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই উন্নতি একশ্রেণির অসাধু, দেশদ্রোহী, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ দর্শনে বিশ্বাসীদের তা সহ্য হচ্ছে না। তারা বিভিন্নভাবে দেশের এই অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা চেষ্টা করছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হত্যা করছে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকা- জন্য আমাদের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং দুর্নাম হচ্ছে তা অপূরণীয়। বিদেশিদের হত্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ, সাহায্য, সহানুভূতি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা চেষ্টা হয়েছে। সফল হয়েছে কী তারা? যারা এই সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নিয়েছে এবং যারা এই হামলায় সাহায্য, সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়েছে, তারা সমাজ ও দেশের শত্রু। তারা অন্ধ বিশ্বাসী, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যাকারী এবং ধর্মকে পুঁজি করে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনকারী। এদের হাত থেকে আমাদের সমাজ দেশকে রক্ষার জন্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
মানুষের প্রাণ/আত্মা ঈশ্বরের দান। এই প্রাণ/আত্মা কারও বিনষ্ট করার অধিকার নেই। কোনো ধর্মই আত্মা হনন করাকে ধর্মীয় বিধান বলে স্বীকার করে না। যারা আত্মা হনন করতে উৎসাহ দেয় এবং মৃত্যুর পরে তাদের জন্য পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে, তারা মিথ্যাবাদী। যারা তাদের কথায় এবং উৎসাহে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাণ নিচ্ছে এবং দিচ্ছে তারা অজ্ঞান, কারণ যারা তাদের উৎসাহ দিচ্ছে, তারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকছে এবং সকল রকম আরাম-আয়েশ সুখ ভোগ করছে। তারা তাদের ব্যবহার করে প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী হচ্ছে।
মানুষের সেবা করাই হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তাকে সেবা করা। ‘ঝবৎাব ঃযব যঁসধহরঃু, ঝবৎাব ঃযব অষসরমযঃু’. পবিত্র বাইবেলে অর্থাৎ কিতাবুল মোকাদ্দেছে ঈসা মসিহ বলেছেন ‘এরপর রাজা তার ডানদিকের যারা তাদের বলবেন, আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছে, তোমরা এসো! জগত সৃষ্টির শুরুতেই রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার অধিকার গ্রহণ কর। কারণ আমি ক্ষুধিত ছিলাম, তোমরা আমায় খেতে দিয়েছিলে। আমি পিপাসিত ছিলাম আর তোমরা আমাকে পান করবার জল দিয়েছিলে। আমি অচেনা আগন্তুকরূপে এসেছিলাম আর তোমরা আমায় দেখতে এসেছিলে। এর উত্তরে যারা ভালো তারা বলবে প্রভু, কখন আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খেতে দিয়েছিলাম, পিপাসিত দেখে জল পান করতে দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অচেনা আগন্তুক দেখে আতিথেয়তা করেছিলাম অথবা আপনার পরণে কাপড় নেই দেখে পোশাক পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা অসুস্থ বা কারাগারে আছেন দেখে আপনাকে দেখতে গিয়েছিলাম? এর উত্তরে রাজা তাদের বলবেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমার এই তুচ্ছতমদের মধ্যে যখন কোনো একজনের প্রতি তোমরা এরূপ করেছিলে, তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।’ (মথি ২৫: ৩৪-৪০ পদ)
পরিশেষে আমার প্রাণপ্রিয় দেশবাসীকে অনুরোধÑ আপনি আপনার সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, ‘পরিবার হচ্ছে সকল শিক্ষার প্রাইমারি স্কুল।’ স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের উপরেই সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন না। মনে রাখুন, দিন রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার সন্তান কত ঘণ্টা শিক্ষকদের কাছে থাকে এবং আপনাদের অর্থাৎ পিতা-মাতার কাছে থাকে? অতএব সন্তানদের আদর্শ মানুষ করার দায়িত্ব কার? বিভিন্ন জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল, যারা নিহত হয়েছে। তার ফলে কী হয়েছে? পিতা-মাতা তার সন্তান হারিয়েছেন, দেশ সুনাম হারিয়েছে, দেশবাসীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সকলের মঙ্গল কামনায় শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ
লেখক: প্রিন্সিপাল, সিডিসি, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
অনুলিখন: ম্যাক্ডোনাল্ড মিঠুন বৈরাগী / সম্পাদনা: আশিক রহমান