ওয়াশিংটনে মতবিনিময় দেশবিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না : শেখ হাসিনা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। তাই পরিবারকে তেমন সময় দেওয়া হয়ে উঠে না। ওয়াশিংটনে বসেও প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা করে অফিস করে দেশের জরুরি কাজ সমাধান করেছি। বাংলাদেশকে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার টাইসন কর্নারের রিটজ কার্লটন হোটেল বলরুমে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে এই মতবিনিময় সভায় তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর কারণে তিনি জন্মদিনের অনুষ্ঠান করবেন না। যে কারণে জন্মদিনের কেক কাটা হয়নি। ওয়াশিংটনের কর্মীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করার কথা থাকলেও তা করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আমার ঋণ অনেক। যখনই বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে তখনই প্রবাসী বাংলাদেশিরা এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ১/১১-র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে ফেরার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আমার সঙ্গে দেশে গিয়েছিলেন। প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার জন্য আজো আমি বেঁচে আছি। এখনো আল্লাহর রহমতে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। ১/১১-র সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের শক্তি ও সাহসের জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
ওয়াশিংটন থেকে এনা জানায়, মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছিলেন। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, অপরাধীদের বিচার হচ্ছে, জাতির জনকের হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সব হত্যাকা-ের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে।
তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন, দেশবিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে আমাদের সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। তৃণমূলপর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।
তিনি জানান, টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।
শিশু ও নারীর সার্বিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটালকেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।
‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুঃস্থ, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশকেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের সাউথ সাউথ, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর আইসিটি, পানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ও এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সফলতা অর্জনসহ নানা বিষয়ে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের আরও বেশি করে দেশের উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী হোটেল ছেড়ে যাওয়ার পর সভাস্থলে বাইরে বিএনপি-জামাতের কর্মীরা বিক্ষোভ করে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম