আলোচনা হবে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে খালেদা জিয়ার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং মধ্য অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ সফরকালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। এ দুটি বৈঠক ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এর বেশিরভাগই হবে সরকারিভাবে। এর বাইরেও তিনি একটি বৈঠক করবেন। সরকারিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক হবে এমন কোনো সিডিউল না থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হবে চীনের প্রেসিডেন্টের। বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে এ বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্র জানায়, তার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে স্থান ও সময় এখনো ঠিক হয়নি। দিনক্ষণ আরও ঘনিয়ে এলে এ ব্যাপারে সিডিউল চূড়ান্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, চীনের প্রেসিডেন্ট যে হোটেলে থাকবেন সেখানে দুজনের মধ্যে এ বৈঠক হতে পারে। এছাড়াও তিনি যদি বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসায় বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন তাহলে তার বাসায়ও বৈঠক হতে পারে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গত বছর মে মাসে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশ সফর করেন তখন তিনি সরকারের সবার সঙ্গে বৈঠক করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন কিংবা বিএনপির কারও সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। ওই সময়ে বৈঠক না করার কারণে এ নিয়ে বিএনপির যেসব নেতারা কূটনৈতিক বিষয় দেখেন ও যোগাযোগ রক্ষা করেন তাদের অনেকটা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো ছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে এবং সব শেষ গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সংসদের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে আগের মতো ওই ধরনের যোগাযোগটা রক্ষা হয়নি। তবে সম্পর্কের অবনতি হয়নি। সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। তবে এরমধ্যে গত সরকারের আমল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোটের সঙ্গেও চীনের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সৈয়দ আশরাফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করার পর থেকে সম্পর্ক আরও জোরালো হয়। ফলে সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক থাকায় ও ব্যবসা বণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমান সরকারও বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে চীনের কাছ থেকে। তবে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ কমে যাওয়ায় তারা বিশেষ কোনো সুবিধা পায়নি গত কয়েকবছর।
সূত্র জানায়, এবার দ্বিতীয়বারের মতো চীনের কোনো রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে চীনের ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি লি শিয়ানিয়ান ঢাকা সফর করেন। শি জিন পিং হচ্ছেন চীনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
সূত্র জানায়, গত বছর মে মাসে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং বাংলাদেশ সফরে আসেন। তবে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি, কোনো সাক্ষাৎও হয়নি। যদিও বিএনপির তরফ থেকে চেষ্টা ছিল বৈঠক হওয়ার ব্যাপারে। ওই সময়ে তা সম্ভব হয়নি। তবে এবার বিএনপি এমন হোক তা চাইছে না। এই কারণে তার বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে যাতে বৈঠক হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে বিএনপির সংশ্লিষ্টদের কথা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে। সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের সময় ও স্থান ঠিক করার জন্য বিএনপির তরফ থেকে চীন দূতাবাসেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এই চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। চীন দূতাবাসও বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়কে চিঠি দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হবে এমনটাই জানানো হয়েছে। সে হিসেবে বিএনপি তার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে প্রাক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আরও সহযোগিতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্টগুলো আলোচনা করবেন। এছাড়াও বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এশিয়ান হাইওয়ের বিষয়টিও আলোচনা হতে পারে। বিএনপি সরকারের আমলে এশিয়ান হাইওয়ে করার ব্যাপারে দুই দেশ উদ্যোগ নিয়েছিল। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এতদিন এশিয়ান হাইওয়ের কাজ শুরু হয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেত। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম