শেখ হাসিনার মানবিক আখ্যান
মিল্টন বিশ্বাস
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এখন নিয়ন্ত্রণে। চালসহ খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে এবং স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্বমন্দা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের সমাধান, রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিশাল সাফল্য এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির ফলে প্রকৃতই বদলে গেছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব ব্যবহারের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলেরই মনে থাকার কথা যে (গত শাসনামলে) তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র ৪৯ দিনের মধ্যে সংঘটিত হয় ঢাকাস্থ পিলখানার বিডিআরকর্তৃক সেনাকর্মকর্তাদের রক্তাক্ত হত্যাকা-। মহলবিশেষ এই সুযোগে দেশে এক সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের মারাত্মক উস্কানি দিয়েছিল। চরম ধৈর্য্য, বিচক্ষণতা, অসীম সাহস এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেন এবং সেনাবাহিনীতে আস্থা ফিরিয়ে আনেন। দেশ এক চরম অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পায়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর সেই নির্মম ঘটনার বিচারের রায় ঘোষিত হয়েছে। ১৫২ জন অপরাধীকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোসহ অন্যান্য সাজার রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো অপরাধীদের শাস্তির বিধান করা। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার উৎসও এটি। উপরন্তু নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার পূরণ করায় সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকহারে। নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং অনেকেরই সাজার রায় কার্যকর হওয়ার পথে। সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। এজন্য স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতির তদন্ত, অনুসন্ধান, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদক প্রয়োজনে মন্ত্রী, আমলাসহ যেকোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সার্চ কমিটির সুপারিশে শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ক্ষমতা ও লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা তথা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে চলেছে। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) দশম সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬ সহস্রাধিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের শূন্য আসনসমূহের নির্বাচন শেষ করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা অর্জিত হয়েছে।
দুই বছর আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে বলে যে বিতর্ক চলছিল সে সম্পর্কে মানবিক চেতনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে। অপরাধী অপরাধীই। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। এটি জনগণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার।’ এই মানবিক অঙ্গীকার আছে বলেই বর্তমান সরকার জনপ্রিয়। জনগণের আস্থা তাদের ওপর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সহিংসতামুক্ত দেশ দেখে আমরা অভিভূত। এদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে নাÑ এই প্রত্যয় মানবতাবাদেরই প্রত্যয়। শেখ হাসিনা তার ধারক ও বাহক। অন্যদিকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত জীবনযাপনের দৃঢ় অঙ্গীকারে দীপ্ত তার মানবিক রাজনীতি। (শেষ)
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান