তিন হাজার বছর আগের গ্রাম
আজকের পৃথিবী, আজকের মানুষ ঠিক একদিনে কিংবা আকস্মিকভাবে আসেনি। ইদানিং আমরা পেয়েছি কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল পৃথিবী এবং আরও কতো কী। এর পেছনে রয়েছে বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাস খুঁড়ে খুঁড়ে বের করা হয়েছে মানুষের অতীত কীর্তিকলাপ, দৈনন্দিন জীবনের কথা এমনকি আঁচ পাওয়া গেছে তার সময়কার চিন্তাভাবনাও। কেননা মানুষ যেখানেই গেছে, সেখানেই রেখে গেছে তার পদচিহ্ন। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ধুলা জমেছে, মাটিতে চাপা পড়েছে। কিছুদিনের জন্য হারিয়েও গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। কিন্তু মিলিয়ে যায়নি একেবারে। সেই চিহ্ন ধরে পিছাতে পিছাতে চলে গেছে সেই সুদূর অতীতে। এই যেমন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজশায়ারে ব্রোঞ্জ যুগের একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানকার মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছে তিন হাজার বছর আগের সুতা। এটি পেচিয়ে বল আকারে রাখা, আরেকটি ববিনের চারপাশে পেচিয়ে রাখা। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো এত ভালো অবস্থায় আছে যে, তা দেখে ঐতিহাসিকরা বলছেন বিস্ময়কর।
সুতাগুলো পাওয়া গেছে পিটার্সবরোর কাছে মাস্ট ফার্মের একটি পরিত্যক্ত বসতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজার হাজার বছর আগে ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকা-ের ফলে লোকজন চলে যায় এ বসতি ছেড়ে। উদ্ধার করা জিনিসপত্রগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতাত্ত্বিক ইউনিটের প্রতœতাত্ত্বিকরা ফেসবুক পেজে দিয়েছেন। সুতাগুলো প্ল্যান্ট ফাইবার থেকে তৈরি এবং যেভাবে সুতাগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে তাকে বিস্ময়কর বলতেই হবে। প্রতœতাত্ত্বিক দলটিকে এখন সবচেয়ে কঠিন কাজটি করতে হবে। সুতাগুলোকে পরিষ্কার করে আগের রঙ আবার ফিরিয়ে আনা। কার্বনাইজেশন করায় সুতার রং জ্বলে গেছে।
যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, একসময় বেশ সমৃদ্ধশালী ছিল এখানে বসতিস্থাপনকারীরা। তারা মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাষাবাদে নিয়োজিত ছিল। হঠাৎ একদিন নাটকীয়ভাবে বসতিটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পিটার্সবরোর কাছে জলাভূমির প্রান্তে গড়ে ওঠা বসতিটি জ্বালিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা। তবে বসতিটি নির্মাণ করার খুব বেশিদিন পার না হতেই অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। প্রতœতাত্ত্বিকরা বলছেন, গ্রামের বাড়িঘর যেনতেন ছিল না। যে কাঠামো পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যায়, ওগুলো ছিল পুরোদস্তুর একটি বাড়ি। সেখানে পাওয়া গেছে পলিমাটির তৈরি পুতি, নকশা করা নেকলেস, ব্রোঞ্জের তৈরি ড্যাগার, বড় একটি কড়াইয়ের হাতল, ব্রোঞ্জের তৈরি লাঠি ইত্যাদি। এছাড়া লাইম গাছের বাকলের তৈরি পোশাক ও পশমের কাপড়। মাটির জগ, কাপ, গামলাও পাওয়া গেছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
আগুনে সম্ভবত মারা গেছে দুটি কুকুর। একটি কাঠের ঘরে আটকা পড়েছিল সেটি, তখনই এটি ধ্বসে পড়ে হুইটলসের নেন নদীতে। প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি মূলত পম্পোলি নামে পরিচিত। সেই সময়কার অপেক্ষাকৃত সম্পদশালী লোকের বাস ছিল সেখানে। এছাড়া কাঁচের তৈরি পুতি, জেট ও অ্যাম্বারও পাওয়া গেছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে। ধারণা করা হয়, ওগুলো আমাদানি করা হয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। কাপড় ছাড়াও মোটা পশমের তৈরি কার্পেট ও দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার মতো কাপড় বা কাপড় জাতীয় জিনিস তিন হাজার বছর আগের জীবনযাপনের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেয়। কাঠ মাটিতে পোতা হয়েছে লম্বাভাবে। কিন্তু কাঠগুলোকে এখনও অনেক তাজা মনে হয়। অথচ ভবনের বেশিরভাগ পুড়ে গেছে আগুনে। এছাড়া এখনও ঘুনে না ধরায় এমন মনে হয় যে, এ বসতি বেশিদিন আগের নয়। আর এই বিষয়টিই মূলত ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্লেষকদের। খনন কাজে নিয়োজিতদের ওয়েবসাইটে বলা হয়, কাঠগুলো পুড়ে যাওয়ার পরও মাইক্রোসকোপ দিয়ে পরীক্ষা করার সময় দেখা যায় যে, ওগুলো এখনও সবুজ রয়েছে। সাইটে আরও বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আসছে মাসগুলোতে আরও তথ্য যখন জানা যাবে, তখন বিষয়টি অনেকাংশে খোলাসা হয়ে যাবে।
গ্রন্থনা: আশিক রহমান, সূত্র: ইন্টারনেট