স্মার্টকার্ডের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী
দেলওয়ার হোসাইন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত ধরনের নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, গ্রহণ করা হবে। তবে তার ফায়ারওয়াল থাকতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসি ও সংশ্লিষ্ট স্মার্টকার্ড প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এই স্মার্টকার্ড রাষ্ট্রপতিকে পৌঁছে দেবেন। এরপর সিইসি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তার স্মার্টকার্ড তুলে দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে গিয়ে ১০ আঙুলের ছাপ দেন এবং স্মার্টকার্ড সংগ্রহে চোখের স্ক্যানিং করান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিজয়ী বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান এবং তাদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত এই স্মার্টকার্ড প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেইন, ইমরুল কায়েস ও তাজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাদের স্মার্টকার্ড গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উন্নত কার্ডই সব রকম সেবা দেবে। ঘরে বসেই এখন অনেক কিছু করা সম্ভব হবে, যার সহায়ক হবে এই স্মার্টকার্ড। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। এই কার্ড প্রদানের মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ হলো। অনেক প্রযুক্তি আছে, সেসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই কার্ডের তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কেউ যেন তথ্য ব্যবহার করে কোনো অপরাধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
২০০৬ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার জন্য আওয়ামী লীগের দাবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই দাবি করেছিলাম ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার। যদিও সে দাবি উপেক্ষিত হয়। কিন্তু এটা প্রমাণ হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের ক্ষমতার সময়ে যে ভোটার তালিকা করে, তাতে এক কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত ছিল। পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আজ যে স্মার্টকার্ড আমরা প্রদান করলাম, আমাদের সে অঙ্গীকারই আমরা রক্ষা করলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। সেটাই প্রমাণিত হল।
সরকারের জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনোভাবেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। যারা এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের শনাক্ত করতে এই কার্ড যথেষ্ট সহযোগিতা করবে। স্মার্টকার্ড থাকলে যে কোনো অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করা বা শনাক্ত করা সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদেরও এই নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারাগারে বন্দিদেরও পরিচয়পত্র দেওয়া দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে যারা ভোট দিতে পারে, অর্থাৎ ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী, তাদেরই পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়নি, তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্মার্টকার্ডের কারিগরি দিক এবং এর ব্যবহার নিয়ে দুটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। নাগরিকদের পুরনো পরিচয়পত্র ফিরিয়ে নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম