ফেসবুকে আয়নাবাজি মুভি…
আপনি দেখেন নাই আয়নাবাজি?
আশীফ এন্তাজ রবি, সাংবাদিক ও সঞ্চালক
আমাদের শহরে ভয়ংকর ধরনের কিছু মানুষ আছে। যেমন শাওন ভাই। মাইন্ড রিডিং ব্যাপারটা বোঝেন? আপনার মনে কি আছে, খোলা বইয়ের মতো শাওন ভাই সেটা পড়তে পারেন।
অমিতাভ রেজা। দূর থেকে, পরম আগ্রহ নিয়ে, মানুষটাকে স্টাডি করছি গত একযুগ ধরে। উনার মতো সিনেমা বোঝা মানুষ বাংলাদেশে আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। রাশেদ জামান। যার হাতে ক্যামেরা কথা বলে। চঞ্চল চৌধুরীকে হলিউড পেলে বর্তে যাবে। অনম বিশ্বাসের হাতের জাদু, তার সেক্টরের লোকেরা ভালোই জানেন।
এই ভয়ংকর মেধাবীরা এক হয়েছেন। একটি শিল্পের জন্য। আয়নাবাজি। ট্রেলার দেখে যেমন উত্তেজিত হয়েছিল জনতা, পুরো সিনেমা দেখে আরও ভয়ানক উত্তেজিত তারা। আমি দীর্ঘদিন পর দেখলাম, কোনো বাংলা সিনেমা একবার নয়, দ্বিতীয়বার দেখার জন্য মানুষ লাইন দিচ্ছে।
আয়নাবাজি বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিল। অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেল। একটা বাংলা ছবির জন্য মানুষকে হলমুখী করল। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আয়নাবাজিকে বাঁচিয়ে রাখা। রিকশায় চড়েছেন, রিকশাওয়ালাকে বলুন, ভাই আয়নাবাজি দেখছেন? বাসের সহযাত্রীকে বলুন, আপনি দেখেন নাই আয়নাবাজি? বন্ধুদের ঘাড়ে ধরে হলে নিয়ে যান।
সিনেমা দেখা দায়িত্ব না। নঁঃ ভালো সিনেমা দেখতে মানুষজনকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে আসল দায়িত্ব। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আজ গভীর সংকটে, এইসব খাজুরা আলাপ বাদ দিয়ে উস্কানি দিন চারিদিকে, ছবিটি দেখার জন্য। ওটাই আপনার কাজ।
ফেসবুক থেকে আয়নাবাজি ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। পথে প্রান্তরে, গ্রামের ভাঙা সিটের সিনেমা হলে। আয়নাবাজি বাংলাদেশের সিনেমা, যেটা নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। আমি গর্বিত। আপনি?
আয়নাবাজি মুভি কেন সবার মুখে মুখে?
হাসান যোবায়ের, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ডিআইউ ক্রিয়েটিভ পার্ক
দেখে আসলাম আয়নাবাজি (অুহধনধলর- ঞযব গড়ারব)। এখনও মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। কি দেখলাম? মনে হলো এই মুভি নিয়ে রিভিউ দিলেও কম হয়ে যাবে। আচ্ছা ঞযব ঝযধংিযধহশ জবফবসঢ়ঃরড়হ মুভির কোন রিভিউ দিয়ে বোঝানো সম্ভব? এখন পর্যন্ত ওগউন তে যদি এই মুভি টপ রেটিং মুভি হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব, বাংলাদেশের মুভিকে যদি রেটিং করা হয় তাহলে ‘আয়নাবাজি’ থাকবে সবার উপরে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এত সাসপেন্সসহ কোনো মুভি পূর্বে তৈরি হয়নি। গল্প, মেকিং, স্টোরি টেলিং, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কালার গ্রেডিংসহ কমপ্লিট প্যাকেজ হচ্ছে, ‘আয়নাবাজি’। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এই মুভির খুত কোথায়? এটার সবচেয়ে বড় খুত হচ্ছে এই ১০০% নিখুত মুভি কেন এতদিন পাইনি!
এবার আসি চঞ্চল চৌধুরী। থিয়েটারের কি শক্তি তা হয়তো উনি একাই বুঝিয়ে দিলেন। ঈধঃপয গব ওভ ণড়ঁ ঈধহ মুভির ডিক্যাপ্রিও-এর চরিত্র সবার মনে আছে তো? লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও যদি অভিনয়ের জন্য অস্কার পায় তাহলে আমাদের দেশের চঞ্চল চৌধুরীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। একসঙ্গে এত চরিত্র চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা সবার নেই। জাত অভিনেতা হলেই সম্ভব।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এটি শুধু নাম নয়, একটি ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের টিভিসিগুলো এত এত স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে চলে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো অমিতাভ রেজা। মাত্র ২ মিনিটে যে অসাধারণ গল্প বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যিনি উপহার দিতে পারেন তিনি যদি ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পান গল্প বোঝানোর জন্য, তাহলে সেটা কেমন হতে পারে অনুমান করতে পারেন? আমার মনে হয়, মুভি তৈরির জন্য উনি এতসময় নিয়েছেন শুধুমাত্র আমাদের ম্যাচিউরিটি তৈরির জন্য। কারণ এই মুভি বুঝতে হলে শুধু দুচোখ দিয়ে দেখলে হবে না, মনের চোখ দিয়ে দেখতে হবে, দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের চোখ দিয়ে দেখতে হবে, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। মুভি ডিরেকশন খেলা নয়, সাধনার বিষয় সেটাই হয়তো ১৫ বছর সাধনা করে বুঝিয়ে দিলেন অসরঃধনয জবুধ ঈযড়ফিযঁৎু।
আয়নাবাজি মুভি কেন সবার মুখে মুখে? কিসের এত মহত্ব? আচ্ছা আয়নাবাজি মুভির বড় ম্যাসেজের সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট ম্যাসেজগুলো সবাই ধরতে পেরেছেন? একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব, পুলিশের দায়িত্ব কিংবা সাংবাদিক হিসেবে আসলেই কি করা উচিত এই ম্যাসেজগুলো পেয়েছেন তো? আমাদের ঢাকা শহরকে এত পজিটিভভাবে পূর্বে কেউ দেখাতে পেরেছে? মুভি সম্পর্কে আর তেমন কিছু বলব না। এটার জন্য আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপরেই ছেড়ে দিলাম।
দর্শক হিসেবে আমাদের কাজ কী? তেমন কঠিন কিছু না। সিনেমা হলে গিয়ে এই মুভি দেখা প্রথম কাজ। দ্বিতীয়বার কেন আবার দেখতে যাবেন সেটা না হয় নাই বললাম। একেকজন দর্শক একেকটি টিভি চ্যানেল। তাই প্রচারের জন্য এই দর্শকরাই যথেষ্ট। ‘ডড়ৎফ ড়ভ সড়ঁঃয’ বলে যে অসাধারণ মার্কেটিং পাওয়ার আছে সেটাই হচ্ছে দর্শক। এছাড়া ওগউন তে গিয়ে আয়নাবাজির রেটিং দিয়ে বাংলাদেশি মুভি হিসেবে সবার উপরে নিয়ে আসতে পারেন।
মুভি রিভিউ হিসেবে এটাই আমার প্রথম। ছোট করে লিখতে চেয়েও বড় হয়ে গেল। আরও অনেক কিছুই বাদ রয়ে গেল। সেটা না হয় হবে আরও একদিন।
জয় হোক আয়নাবাজির, জয় হোক বাংলাফিল্মের।
সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মুভিটা দেখুন
আবু সুফিয়ান নিলাভ, সিইও, নিজল প্রোডাকশন
আমি মুভি রিভিউ দিলে নাকি আর কারও মুভি দেখা লাগে না, তাই কোনো রিভিউ দিলাম না। তবে আমাদের বাসার সিনগুলো দারুণ এনজয় করেছি। শুধু একটাই কথা বলি কি নেই এই ‘আয়নাবাজি’ মুভিতে? ক্রাইম, রোমান্স, মুখের ভিতরে মুখোশ, আয়নার ভিতরে আয়না, চরিত্রের ভিতরে চরিত্র, হাসি, গতানুগতিক এর বাইরে মুভির সংলাপ, শিল্প, অসাধারণ লাইটিং এর কাজ, সমাজের সাধারণ বাস্তবতা, একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দর্শককে মুভি স্ক্রিনে আটকে রাখাÑ সবই ছিল এই মুভিতে।
এা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মুভি দেখার মতো একটা মুভি। আমি সবাইকে বলব হলে যান, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মুভিটা দেখুন।
অসরঃধনয জবুধ ঈযড়ফিযঁৎু ভাই দারুণ কাজ হয়েছে, ঈযধহপযধষ ঈযড়ফিযঁৎু ভাই এর অভিনয় এককথায় অসীম, গধংঁসধ জধযসধহ ঘধনরষধ চোখের মাঝে যে মায়া, যে রোমান্টিকতা ছিল তা সত্যি প্রশংসা করার মতো। অভিনন্দন পুরো আয়নাবাজির টিমকে।
অমিতাভ ভাই ‘আয়নাবাজি-২’ দেখতে চাই, চৌধুরী সাহেবের শেষ পরিণতি দেখতে চাই।