এখন শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ
সুভাষ সিংহ রায়
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সবকিছু হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই।’
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র পাঁচদিন আগে ১১ মে (১৯৮১) তারিখে বিশ্বখ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকা বক্স আইটেম হিসেবে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন তখন সময়টা খুব খারাপ ছিল। বলতে গেলে যেকোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত, খুনিরা যেন সব জায়গায় ওৎ পেতে ছিল। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এত ঝুঁকি জেনেও দেশে ফিরে যাচ্ছেন কেন?
শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারকে মোকাবিলা করবেন, তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
নিজের মনোবল কত দৃঢ় হলে এভাবে একজন মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে পারেন? হয়তো বাংলা বিভাগের সহপাঠী কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো বলে উঠেছেনÑ
‘১৯৭৫-এ আমি হারিয়েছি আমার প্রতীক, শৌর্যবীর্য ধারা অন্ধকারে। তারপর থেকে ভিতরে ভিতরে একা, গৃহহারা।’
রাজনীতির আসল সত্যটি তিনি একেবারে শুরুতেই ধরতে পেরেছিলেন। তাইতো তিনি বলতে পারেন, ‘আমার রাজনীতি হচ্ছে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই, যেখানে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগণ এক মানবেতর জীবনযাপন করে।’ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতার মতো দরিদ্র-নিপীড়িত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সবসময় চিন্তা করেন। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দরিদ্র মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশ্রায়ণ
প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, গৃহায়ন তহবিল, ঘরে ফেরা কর্মসূচি চালু করেছিলেন। এদেশে তিনি সর্বপ্রথম চালু করলেন বয়স্ক ভাতা, দুঃস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ও বিধবা ভাতা চালু। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর টানা দ্বিতীয়বার দেশ পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের উন্নত জীবন দিতে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন, এমনভাবে দেশের অর্থনীতি পরিচালনা করতে হবে, যাতে করে গরিব-দুঃখী মানুষের জীবনে খানিকটা স্বস্তি মেলে। তাই চাল, ডাল, তেল, নুনের দাম যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায় সেদিকে তিনি সদাসচেতন থাকেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ভালো অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য সততা, দক্ষতা ও সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই জাপানের বিখ্যাত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে। ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি এমন একটি দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, যে দেশের জন্য আমার পিতা, আমাদের মহান নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অশ্রুপাত করেছেন, ঘাম ঝরিয়েছেন ও বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সকল কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আমি এখন আমার দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে একই কণ্ঠে উচ্চারণ করিÑ আমাদের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে বড় কোনো আদর্শ নেই। গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার চেয়ে বড় কোনো ভিত্তি নেই এবং আইনের শাসন ছাড়া স্বাধীনতার জন্য বড় কোনো গ্যারান্টি নেই।’
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান