বদিউল আলম মজুমদার
বহুল আলোচিত কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকেও তার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হচ্ছে। রকিবউদ্দিন আহমেদের আমলে নির্বাচন কমিশন একরকম ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেছিল। তার প্রমাণ আমরা স্পষ্টভাবেই পেয়েছি ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন নির্বাচনের মাধ্যমে।
ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ, এটা নিঃসন্দেহে সত্য। এই কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে একরকম ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান কমিশনের আগের কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল। তারা নানা ধরনের সংস্কার করেছিল, নির্বাচনকে অনেকাংশেই সহিংসতামুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। ওই কমিশন শুধু আইনকানুন পরিবর্তনই করেননি বরং আইনের সঠিক বাস্তবায়নও করেছিলেন। রাজনৈতিক দল, দলের প্রার্থীরা আইনগুলো মেনেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছিল। একইসঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও প্রশাসন বহুলাংশে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল।
রকিবউদ্দিন কমিশনও প্রথম দিকে সফল ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সত্যিকারের রূপ বেরিয়ে আসে। এই কমিশন যে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছিল, তা সুস্পষ্ট ছিল। এখান থেকে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করব বলে আশা করি। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যতই নিরপেক্ষ বা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেনÑ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন কমিশনকে সহায়তা না করে, ক্ষমতাসীন সরকার সদিচ্ছা পোষণ না করে ও রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচারণ না করে।
এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নতুন কমিশন যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। পক্ষপাতদুষ্ট লোকদের নিয়ে যেন নতুন কমিশন গঠন করা না হয়। নতুন কমিশন গঠনের নিরপেক্ষ লোক খুঁজে বের করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা দরকার। সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন করাও প্রয়োজন। আইন প্রণয়ন করে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মাত্রা যদি নিরূপণ করা যায়, তাহলে অযোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা হবে। অনুসন্ধান কমিটি করা হবে সেটাও খুব জরুরি এখন। অনুসন্ধান কমিটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করা প্রয়োজন। এ কমিটিতে মহাজোট অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, সুজনÑ এসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি থাকতে পারে কমিটিতে। জ্যেষ্ঠ একজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা যায়। এ কমিটির মাধ্যমে তারা যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে, তারা কোন যোগ্যতায় বা প্রেক্ষিতে নাম প্রস্তাব করছে তার কারণও বিবেচনা করা দরকার। এ সবকিছুর বিস্তারিত যদি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা যায় জনসাধারণের সামনে, তাহলে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারব। এর মধ্যে থেকেই হয়তো আমরা একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সক্ষম হবো।
পরিচিতি: সম্পাদক, সুজন
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম/সম্পাদনা: আশিক রহমান