আলেপ্পো থেকে শিশুর টুইট যুদ্ধ ভুলে যেতেই পড়াশোনা করছি
নূসরাত জাহান : সাত বছরের বানা আলাবেদ। বাড়ি সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর আলেপ্পোতে। কয়েকদিন আগে সে একটি ছবি টুইট করেছে। পড়ার টেবিলে বই আর পুতুল নিয়ে ছবিটি তোলা। ছবির ক্যাপশনে বানা লিখেছে, আলেপ্পো থেকে আপনাদের সবাইকে শুভ অপরাহ্ন। যুদ্ধকে ভুলে যেতেই আমি পড়াশোনা করছি।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতি আসলে কার্যকর হয়নি। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী আলেপ্পোতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও বোমা হামলা চলছে। যুদ্ধের কারণে এখানকার মানুষের জীবনযাপন অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত তাদের লড়াই করতে হয়। সেই চিত্র পাওয়া গেছে বানার টুইটে।
বানার বাড়ি আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চলে। যেটা বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ওই এলাকার মানুষের সংগ্রামের কথা বলতেই নিয়মিত টুইট করে বানা। ধ্বংসের ছবি, দুই ভাই ও মায়ের সঙ্গে তোলা ছবি টুইট করেছে। দুই ভাই ৫ বছরের মোহামেদ ও তিন বছরের নূরের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে বানা লিখেছে, বিমান (হামলা হওয়ার আগে) আসার আগে আমরা ছবি আঁকছিলাম। শান্তিতে ছবি আঁকার পরিবেশ চাই আমরা।
তিন ভাই-বোনের একটি ছোট ভিডিও টুইট করেছে বানা। আর লিখেছে, ‘আমরা সারা জীবন একসঙ্গে থাকতে চাই।’ এরপরই বোমা হামলায় বিধ্বস্ত একটি বাড়ির ছবি পোস্ট করে বানা লিখেছে, ‘যদিও আমাদের পাশের বাড়িতে এখনই বোমা হামলা হলো। বোমা যেকোনো সময় আমার জীবনও কেড়ে নিতে পারে।’ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও রাশিয়া ও সিরিয়ার বাহিনী পশ্চিম আলেপ্পোতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বোমা হামলা চালাচ্ছে।
@ধষধনবফনধহধ টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করছে বানা। এরইমধ্যে তার কয়েক হাজার ফলোয়ার হয়ে গেছে। বানার মা ফতেমাহ বলেছেন, ‘নিজেদের দুর্দশার কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায় বানা। সে বলেছে, মা কেন কেউ আমাদের সাহায্য করে না?’ এ প্রশ্নের উত্তর বানার মায়ের কাছে নেই।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘বোমা হামলায় বানা তার প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছে। সে সব কিছুই দেখছে। বন্ধুর মৃত্যু, স্কুল ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এগুলো তার উপর প্রভাব ফেলেছে। সেখান থেকেই তার টুইট শুরু।’
ফতেমাহ বলেন, ‘সে আমাকে এমন সব প্রশ্ন করে যার উত্তর আমার কাছে নেই। কেন সে স্কুলে যেতে পারে না? বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারে না? কেন যুদ্ধ থামাতে কেউ কিছু করছে না? এ ধরনের সব প্রশ্ন। যার জবাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই।’
বানাদের বাড়ি যেখানে, সেখানে ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে কোনোরকমে কাজ চলে। ইন্টারনেটের গতি খুব ধীর। আর টেলিফোনের অবস্থা তো বেহাল। এছাড়া রয়েছে চরম খাদ্য সংকট। ফাতেমাহ জানান, তাদের সংগ্রহে থাকা খাবারও প্রায় শেষের দিকে। কিছুদিন আগে ছোট ছেলে নূরকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল থেকে বলেছে, ওষুধ নেই। এমন বেহাল দশা বিশ্ববাসীকে জানাতে ছোট্ট বানা টুইটারের দ্বারস্থ হয়েছে।
তবে মেয়ের নামে ফাতেমাহই ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছে। বিশেষ করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে করা টুইট নিয়ে। এছাড়া সাত বছরের একটি মেয়ের ইংরেজিতে এত ভালো দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বানার বাবা আইনজীবী। আর মা ফাতেমাহ ভাষা ইনস্টিটিউটে তিন বছর ধরে ইংরেজি পড়ান। ফাতেমাহ বলেন, ‘চার বছর থেকেই বানাকে ইংরেজি শেখাচ্ছি আমি। আপনারা বিশ্বাস করুন টুইটের সব কথা বানার মন থেকে উঠে আসা। আর এটাই সত্য।’ সূত্র : বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী