ইসলামে শিশুর নিরাপদ বেড়ে উঠা এবং ৭৭ শতাংশ শিশুর পর্নো আসক্তি
হুমায়ুন আইয়ুব
সংবাদটা কলিজায় আঘাত করেছে। আমাদের শিশু-কিশোর ও আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে। বেসরকারি একটি গবেষণায় বলছে, রাজধানীতে প্রায় ৭৭ শতাংশ শিশু-কিশোর পর্নো ভিডিওতে আসক্ত। যার কারণে, সমাজে যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ বিকৃত মানসিকতার নানা ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথম কথা হলো, পর্নোগ্রাফির এই আসক্তির কারণে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা কি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে না। মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশের মুসলিম সন্তানদের ধর্ম ও নৈতিকতা চর্চার এই বেহাল দশা আমাদের কীভাবে সজাগ করবে?
ইসলাম মনে করে প্রতিটি মানবসন্তানের জীবনই অত্যন্ত মূল্যবান। শিশুরা ফুল। শিশুরা স্বপ্ন। মানব মনের বাগ-বাগিচা। ওদের আদর যতœ ও বেড়ে উঠার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রতিটি মা-বাবার দায়িত্ব। তাদের আদর্শ জীবন গঠন করা খুবই জরুরি কাজ। বিশেষ করে ইসলামের অনুপম শিক্ষা ও নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া শিশুদের প্রকৃত আদর্শ জীবন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া প্রতিটি শিশুর মা-বাবার পবিত্র দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বা শিশুরা পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থ্ায়ী সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং বাঞ্ছিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট।’ (সূরা আল-কাহ্ফ, আয়াত: ৪৬)
আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুর মননে আধ্যাত্মিক বিকাশের প্রাথমিক ক্ষেত্র হচ্ছে পরিবার। একটি শিশু সুন্দর মহৎ মানব হওয়ার পেছনে পরিবারের প্রভাব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা জন্ম থেকে ছয়-সাত বছর পর্যন্ত যা শোনে, যা দেখে, তা-ই তার মানসিক বিকাশের প্রাথমিক ভিত্তি। প্রতিটি মুসলিম পরিবার যদি শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও বৃদ্ধির দিকটার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বিকাশের দিকটা গুরুত্ব না দেয়, তাহলে শিশুরা মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে শ্রদ্ধা করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, তিরমিজি)।
আধুনিক যুগে পরিবারই শিশুর মূল শিক্ষাকেন্দ্র হওয়া উচিত। মা-বাবাই শিশুর জন্য জগতের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, আর ঘর হলো শ্রেষ্ঠ পাঠশালা। শিশুদের মনের মতো করে গড়ে তোলা খুবই কঠিন। শান্ত হলেও শিশু শিশুই। তারা অনুভূতিপ্রবণ ও অনুকরণপ্রিয়। শিশুর সামনে যা কিছুই বলা হবে বা করা হবে, এর একটা চিত্র তার মনে অঙ্কিত হয়ে যায়; যা ভবিষ্যতে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই যে সংসারে মা-বাবা নিজেদের মধ্যে ভালো ব্যবহার করে, ভদ্রভাবে চলে, সুন্দর কথা বলে, সে সংসারের শিশুরাও ভালো হয়। যে সমাজসংসারে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, ঝগড়া-বিবাদ, পারিবারিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা লেগে থাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, সেসব সংসারের শিশুরা হয় অবাধ্য ও দুর্বিনীত। তারা বড় হয়ে মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখায়। এ জন্য মা-বাবাকে শিশুদের সামনে সংযত হয়ে চলা বা কথা বলা উচিত; যাতে পরিবারে শিশুরা সুশিক্ষা পায়। শিশুদের শারীরিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষাদানের বিষয়ে নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের (শিশুদের) স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিজি)
ইসলামে শিশুর অধিকারের বিষয়টিকে মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শিশুর আদর, স্নেহ, তার সঙ্গে কথা বলা, খেলাধুলা করা, গান-ছড়া-গল্প শোনানো, তার সঙ্গে সদাচরণ করা, আনন্দ দান ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। পক্ষান্তরে তাকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া, ভয় দেখানো, ধমক দেওয়া বা তাকে অবহেলা করা হলে তার আবেগিক, সামাজিক ও মেধাগত দক্ষতার বিকাশ ব্যাহত হয়। শিশুদের কোমল ও পবিত্র মনে যদি একবার কোনো খারাপ ধারণা প্রবেশ করতে পারে, তবে তা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে থেকে যায়। তাই নবী করিম (সা.) শিশু-কিশোরদের সঙ্গে খেলাচ্ছলেও মিথ্যা বা প্রতারণা করতে নিষেধ করেছেন।
শিশুরা যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এক হৃদয় ভোলানো উপহার, তাই তাদের অন্যায় আবদার ও অসংগত মর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আদর ও স্নেহের আবেগে তাদের ভুল পথে পরিচালনার সুযোগ না দেওয়া এবং আদর্শের পথে গড়ে তুলতে ত্রুটি না করার জন্য মহান আল্লাহ পূর্বাহ্নেই মানুষকে সাবধান করেছেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম