জঙ্গিরা জামিনে বেরিয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়ছে গোয়েন্দাদের
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জঙ্গিরা গ্রেফতারের পর আইনী ফাঁক ফোকর গলিয়ে জামিনে বের হয়ে আসছে। তাদেরকে গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করার পর, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেউ কেউ তথ্য দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ তথ্য গোপন করছে। কারণ তারা জানে যে গ্রেফতার হলেও তাদেরকে বেশি দিন কারাগারে বন্দী থাকতে হবে না। কিছুদিন থাকার পর জামিনে বের হয়ে আসতে পারবে। তাই তথ্য গোপন করছে। ফলে তাদের নেপথ্যে থাকা হোতাদের, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা, অস্ত্রের জোগান দাতা এবং নীল নকসাকারীদের বের করা সম্ভব হয় না।
জঙ্গি দমন নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সংস্থার উর্ধ্বতন একটি সূত্র জানায়, অনেক সময় অনেক জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে উঠানো হয়েছে। কিছুদিন যাওয়ার পর দেখা গেছে ওই সব জঙ্গিরা জামিনে বেরিয়ে এসেছে। জামিনে বের হয়ে আসার পর কোন নজরদারি না থাকায় আবার জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে। এতে করে জঙ্গিবাদের ঘটনাও বেড়েছে। উদ্বেগ বাড়ছে গোয়েন্দাদের।
সূত্র জানায়, গুলশানের ঘটনার সঙ্গে তাহমিদ জড়িত সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছিলো। যদিও পরে বলা হয় তাহমিদ খান তদন্ত কাজে যথাযথ সহায়তা না করার জন্য ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন এর প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে তাকে সন্দেহের বাইরে রাখা হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রমাণ পেলে তাকে পুনরায় আটক করা হবে।
ওই সূত্র জানায়, এই সময়ে তাকে জামিন না দিলেই ভালো হতো। কারণ তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এটা তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে পরে তাকে খুঁজে নাও পাওয়া যেতে পারে। তিনি জামিনে বাইরে বের হয়ে তার নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। এতে করে জঙ্গিবাদের ঘটনা অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ তাহমিদ বাইরে বের হওয়ার পর তাকে কোন নজরদারিতে রাখা হয়নি। যদিও কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, গুলশান হামলার ঘটনার তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ভবিষ্যতে তদন্তে তাহমিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আবারো তাকে গ্রেফতার করা হবে।
সূত্র জানায়, তাহমিদ কেবল নয়, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণ রয়েছে এমন অনেকেই জামিন পেয়েছেন। আগে জঙ্গিদের আটক কিংবা গ্রেফতার করার পর যে ধরনের প্রচারণা হতো এখন তা তেমনভাবে করা হয়না। অনেক সময় এমন অনেক জঙ্গি আছে যাদেরকে আটক করা হয়েছে কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীরা জানতেও পারেনি। এটা করা হয়েছে ইচ্ছে করে। কারণ যখন জঙ্গিরা একজন জানতে পারে অন্য সহযোগীকে গ্রেফতারের কথা তখন তারা সতর্ক হয়ে যায় ও গা ঢাকা দেয়। এতে করে পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হয় না। এই কারণে একটি কৌশল হিসাবেই আমরা জঙ্গিদের আটক ও গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোক তা চাই না। কিন্তু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই এই সব জঙ্গিরা জামিনে বাইরে বের হয়ে আসে। তখন অন্যদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। আর জামিনে তারা বেরিয়ে আসার সুযোগ থাকার জন্য তথ্য না দেওয়ার কারণেও জঙ্গিবাদ নিমূর্লের কাজ পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম