রাজধানীতে কবরের জায়গা সংকট
ফয়সাল খান: রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। গ্যাস, পানি, আবাসনের পাশাপাশি কবরস্থানের জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীতে। ইতোমধ্যে জায়গা সংকটের কারনে কবর সংরক্ষণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) একটি কবরস্থানে সংরক্ষণ বন্ধ থাকলেও জায়গা সংকটের কারনে অন্য কবরস্থানগুলোতেও এই পদ্ধতি বন্ধ করার চিন্তা করছে কতৃপক্ষ।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর অন্যতম প্রাচীন আজিমপুর কবরস্থান। ৩৫ একরের এই কবর স্থানে দৈনিক গড়ে ২০/২৫ টি লাশ দাফন করা হয়। কবরস্থানটির প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট পরিবারের লাশ ছাড়া সাধারণ নাগরিকেদের কবর দেওয়া যায় না। তবে বর্তমানে এই পদ্ধতিটি বন্ধ আছে। এখন শুধু নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে ৫ থেকে ২৫ বছরের জন্য কবরের জায়গা সংরক্ষণে নেয়ার নিয়ম চালু আছে। ৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করলে ১ লাখ ৫০ হাজার, ১০ বছরের জন্য ৩ লাখ, ১৫ বছরে ৬ লাখ, ২০ বছরে ৯ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ১২ লাখ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয় নাগরিকদের। বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানা ও সংরক্ষণ ছাড়া মাত্র ১৬ একরের মতো জমি সর্বসাধারণের জন্য রয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির ধলপুর ও মুরাদপুরে আধা একর করে অপর দুটি কবরস্থান। দিন দিন জয়গা কমতে থাকায় সংরক্ষণের ব্যাপারে শুধু নিরুৎসাহিতই নয়, সংরক্ষণ দেওয়া এখন প্রায় বন্ধ আছে। আবেদন করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করা হয় না।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ৬৫ একর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ৩৫ একর জায়গা জনসাধারণের জন্য, বাকিটা সংরক্ষিত। এক বিঘার কিছু বেশি জায়গার ওপর উত্তরা কবরস্থান। এখানে কোনো সংরক্ষণ দেওয়া হয়না। ডিএনসিসির প্রধান সমাজসেবা কর্মকর্তা, আবুল কালাম আজাদ সাইফুদ্দিন আমাদের অর্থনীতিকে জানান, উত্তর সিটি এলাকায় ১ টি বাদে সব কবরস্থানে সংরক্ষনের সুযোগ থাকলেও বনানীসহ বেশ কয়েকটি কবরস্থানের জায়গা কমে যাওয়ায় এই সুযোগ বাদ দেওয়া হতে পারে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্নে বনানী কবরস্থানটি পারিবারিক সম্পত্তি হলেও পরবর্তীতে পৌরসভা এই কবরস্থানটির কর্তৃত্ব বুঝে নেয়। এর পরে ১৯৮১ সালে বনানী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে এই কবরস্থানটি পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। ৪.৫ একরের কবর স্থানটির মাত্র ০.৬৭ একর জায়গা সাধারণের মৃত দেহ কবর দেওয়ার জন্য নির্ধারিত। অবশিষ্ট ৩.৮৩ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে কোন ব্যক্তি বা পরিবারের নামে কবরের স্থান বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ আছে। কিন্তু যারা আগেই সংরক্ষিত স্থানে জায়গা ক্রয় করেছে সেক্ষেত্রে তার রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কেউ মারা গেলে পূর্বের ক্রয় করা রশিদ দেখিয়ে তার মেয়াদ থাকা অবস্থায় ৩ হাজার ২০ টাকা জমা দিয়ে পুণরায় সেখানে কবর দিতে পারবে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, ২১ শে পদক প্রাপ্ত, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি হয় তবে তা সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট মেয়াদে সংরক্ষিত করা হয়ে থাকে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি