মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারলাম না
রিকু আমির: পরিকল্পনায় থাকা সত্ত্বেও পৃথক শিশু অধিদফতর ও শিশু কমিশন স্থাপন না করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেছেন, সরকার শিশুদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারলাম না। কেননা, পৃথক শিশু অধিদফতর ও শিশু কমিশন স্থাপন কাজ থেমে আছে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিশু : প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতি ২০১৫’ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কিছু দেশের মোট জনসংখ্যা ছয় কোটি উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কিন্তু বাংলাদেশের শিশুর সংখ্যাই ছয় কোটি। এত শিশুর জন্য পৃথক অধিদফতর, কমিশন করা খুবই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। শিশুদের সুরক্ষা প্রদানের প্রতিও গুরুত্ব দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের আশপাশে যে শিশুরা বসবাস করছে, সে শিশুদের খোঁজখবরও যদি আমরা নিয়মিত নিই, এতেও শিশুদের অনেক উপকার হবে, অধিকারের কিছু অংশ হলেও নিশ্চিত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ের শিশু নির্যাতন ও হত্যা প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, দেখা যাচ্ছে, নিত্যনতুন কৌশলে শিশু নির্যাতন-হত্যা করা হচ্ছে। যেটা অত্যন্ত নৃশংস ও দুঃখজনক।
প্রকাশিত প্রতিবেদন সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেন- এডুকোর কর্মকর্তা আবদুর রশিদ ও প্ল্যান বাংলাদেশের কর্মকর্তা তানিয়া নুসরাত। আবদুর রশিদ বলেন, দেশে এখনো শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বেশি। কিন্তু এসব ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। সরকার সার্বজনীন শিক্ষার কথা বললেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা কার্যত এ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। পরিবেশও তাদের প্রতিকূলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ খাবার পানি ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট নেই বললেই চলে।
তানিয়া নুসরাত বলেন, শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধনের সরকারি নিয়ম থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৩ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে নিয়মটি পালিত হচ্ছে। জনসংখ্যা সম্পর্কে যদি সরকারের স্বচ্ছ ধারণা না থাকে, তবে পরিকল্পনা করবে কীভাবে?
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাজ করে ‘বাংলাদেশের শিশু : প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতি ২০১৫’ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে ১০টি সংগঠন। এসব হচ্ছে- সেভ দ্য চিলড্রেন, একশন এইড, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স এসেম্বলি, এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, টেরে ডেস হোমস, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন। এসবই চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশের সদস্য। প্রতিবেদনে দেশের ছয় কোটিরও বেশি শিশুর তথ্য আছে। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি