বর্তমানে সারা দুনিয়ায় নারী-পুরুষ কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও নারী নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নির্যাতনের ফলে অনেকের মৃত্যু হয়, কেউ আত্মহত্যায় বাধ্য হয়। কখনো স্বামী স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে। এসবের মূলে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার অভাব এবং নারীর সম্পদের মোহ ও লালসা তাদের অন্তরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অথচ এসব লোভনীয় জাগতিক উপকরণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নারী, সন্তান, সোনা ও রুপার ভা-ার এবং পছন্দসই ঘোড়া ও চতুষ্পদ জন্তু এবং খেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের কাছে মনোরম করা হয়েছে। এসব পার্থিব ভোগ্যবস্তু এবং আল্লাহর কাছে উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৪)
স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের জের হিসেবে বা যৌতুকের জন্য মারপিট করে বা শ্বাসরুদ্ধ করে, বিষ প্রয়োগে, ধর্ষণের পর হত্যা করে, গুলি করে এবং এসিড নিক্ষেপ করে নানান উপায়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন চলছে।
ইসলামের বৈবাহিক রীতি অনুযায়ী দুজন আল্লাহভীরু নারী ও পুরুষ পরস্পরকে পছন্দ করে যে নীড় বাঁধে, সে সুখের ঘরে একে-অপরের প্রতি কোনোক্রমেই শত্রুভাবাপন্ন ও নির্যাতনকারী হতে পারে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসাই ঘরের বন্ধনটি সুদৃঢ় এবং শান্তিময় করে রাখতে পারে। ইসলামে নারীকে অনেক বেশি মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলাম ধর্মের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। নারী-পুরুষের সুন্দর শান্তিময় জীবন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের ওপর নিয়মানুযায়ী (সুন্দর ও মধুময় আচরণ স্ত্রীদেরও প্রাপ্য) অধিকার আছে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮)
মা-বোনদেরও নিজ নিজ মানবিক মর্যাদা এবং অধিকার ও কর্তব্যের প্রতি সজাগ থাকা উচিত। পুরুষ নারীর প্রতিপক্ষ নয়, নারী পুরুষের প্রতিপক্ষ নয়; বরং দুয়ে মিলেই সমাজ। এ সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির লালন এবং নৈতিকতার বিকাশের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের বীজমন্ত্র।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। সমাজে নারী ও পুরুষের যে ন্যায্য অধিকার ও গুরুত্ব রয়েছে, উভয়ে মিলে তারা যে অভিন্ন সত্তা, এ মানবিকতাবোধকে পুরুষেরা গভীরভাবে উপলব্ধি না করলে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে না। কারণ, নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই নির্যাতনের মূল সূত্রটি লুকায়িত আছে। এ মনোভাব পাল্টানোর জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের পাশাপাশি দেশের আলেম সমাজ ও সচেতন নাগরিকদের প্রধান দায়িত্ব নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সুনীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা। নারীর প্রতি পুরুষের যখন পরিপূর্ণ আস্থা আসবে এবং স্ত্রীকে প্রেম-প্রীতি ও মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে, তখনই পৃথিবী শান্তির নীড় হবে।