হালাল-হারামের পরিচয় ও বিধান
মাওলানা আবদুস সাত্তার
ইসলামি শরীয়াতে হালাল ও হারাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর সব আসমানি গ্রন্থেই হালাল-হারামের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। হালাল-হারামের বিষয়গুলো নির্ধারিত করার ইখতিয়ার শুধুমাত্র আল্লাহর বিধায় বাস্তবজীবনে হালাল কাজ করা আর হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে ইবাদত। ইসলামের মূলমন্ত্রই হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের হুকুম বা আদেশ মানা আর রাসুলুল্লাহ সা. এর তরীকায় জীবন যাপন করা। শুধু মাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দীন ইসলাম নহে অথবা শুধু মাত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ দীন ইসলাম নহে। উভয়ের সমম্বয়েই কালেমা বা দীন ইসলাম।
ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল-হারাম
হালাল: কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যে সব বিষয়কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি শারিয়তের পরিভাষায় তা হালাল বা বৈধ। অন্য কথায়Ñ হালাল অর্থ বৈধ, উপকারী ও কল্যাণকর বস্তুসমূহ। মানুষের জন্য যা কিছু উপকারের ও কল্যাণকর ঐ সমস্ত কর্ম ও বস্তুকে আল্লাহ পাক মানুষের জন্য হালাল করেছেন। যেমন: নামাজ, রোজা , হজ, জাকাত, পর্দা, ছাগল মাংস ভক্ষণ, আল্লাহ নির্দেশিত ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি। একজন মুসলিমের উচিত সর্বদা হালাল বা বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করা।
হারাম: কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যে সব বিষয়কে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি শারিয়াতের পরিভাষায় তা হারাম বা অবৈধ। অন্য কথায়, হারাম অর্থ অবৈধ, ক্ষতিকারক, অকল্যাণকর কর্ম ও বস্তুসমূহ: যা মানুষের জন্য অপকারের বা ক্ষতির কারণ। ওই সমস্ত কর্ম বা বস্তকে আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। যেমন: শুকরের মাংস মানুষের জন্য ক্ষতিকারক, সুদ, ঘুষ, বেনামাজি, বেপর্দা এবং সকল পাপ কর্ম ইত্যাদি। হারাম কাজ করলে আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত বিধায় এ ধরনের কাজ বর্জন করাও বাধ্যতামূলক। যেমন: সুদ খাওয়া, গীবত করা বা অপবিত্র কিছু খাওয়া বা অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য করা।
হালাল ও হারাম বিধানের উদ্দেশ্য
বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। হালাল বিধান পালনেই বান্দার জন্য রয়েছে- আত্মার কল্যাণ, দেহের কল্যাণ এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। যা দীন-ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এতে আল্লাহ বান্দার প্রতি নাজিল করেন রহমত ও বরকত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হারাম কাজ করে তার অন্তর-আত্মা নষ্ট হয়ে যায়, দেহের ক্ষতি হয় এবং বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। যা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে। এক কথায় তাকে গোনাহগার বানিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সব ধরনের কঠোরতা তুলে নিয়ে ইসলামের হালাল ও হারামের বিধান মানুষকে অশান্তির শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি দান করেছেন। হালাল-হারামের বিধান নির্ধারণে আল্লাহ বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে সেই রাসুলকে (যিনি) নবি, উম্মী, যাঁকে তারা পায় উল্লিখিত তাদের কাছের তওরাতে ও ইঞ্জিলে, আর যিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকাজের ও তাদের নিষেধ করেন অসৎকাজ থেকে, আর তাদের জন্য বৈধ করেন ভালো বিষয়বস্তু ও তাদের জন্য নিষেধ করেন মন্দ জিনিসগুলো, আর যিনি তাদের থেকে দূর করে দেন তাদের বোঝা ও বন্ধন যা তাদের উপরে ছিল। অতএব যারা তাঁতে বিশ্বাস করে ও তাঁকে মান্য করে ও তাঁকে সাহায্য করে আর অনুসরণ করে সেই আলো যা তাঁর সঙ্গে অবতর্ঢু হয়েছে, এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম। সূরা আরাফ: আয়াত ১৫৭
হালালের উদাহরণ
মুসলমানদের গরু, ছাগল খাওয়ার হুকুম আল্লাহ পাক দান করেছেন। কিন্তু তা যদি আল্লাহু আকবার তথা আল্লাহর নামে বলে কিন্তু মুহাম্মদ সা. এর তরীকায় জবেহ করা না হয় তবে তা মুসলমানের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কারন গরু বা ছাগল খাওয়া আল্লাহ পাকের হুকুম আছে কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত তরীকা না থাকার কারনে তা হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু তা যদি আল্লাহ পাকের নাম নিয়ে সুন্নত তরীকায় জবেহ করা হয় তখন তা হালাল হবে। তেমনি শরীয়তের সমস্ত কাজ যখন আল্লাহ পাকের হুকুম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকায় পালিত হবে তখন তা হালাল বা বৈধ এবং এবাদতে গন্য হবে নচেৎ নয়।
হারামের উদাহরণ
আল্লাহ পাক শুকর খাওয়াকে হারাম করেছেন। কিন্ত কেউ যদি শুকরকে সুন্নত নিয়মে জবেহ করে তবুও তা হালাল হবে না বরং হারাম হবে। এখানে আল্লাহ পাকের হুকুম নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা লাগালেও তা বৈধ বা হালাল এবং এবাদতে গন্য হবেনা। তেমনি আল্লাহ পাক যে সমস্ত কাজ বা বস্ত হারাম করেছেন যেমনÑ শুকর, সুদ , ঘুস, বেপর্দা, হারাম ব্যবসা ইত্যাদি সককিছুই হারাম হবে। এ গুলো ইবাদতে গণ্য হবে না।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁর বান্দাদের হালাল ও হারামের পরিচয় লাভ করার পর এর বিধান পালনের তাওফিক দান করেন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করেন এবং পরকালে মুক্তি দান করেন। আমিন।