গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা অর্থায়নে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীসহ তিনজন
বিপ্লব বিশ্বাস: গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। এ দুটি ঘটনায় অর্থ সরবরাহকারী তিনজন বড় ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে গোয়েন্দারা। এ ছাড়া বিদেশি আরও দুই ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তিন ধাপে হুন্ডিতে ৫০ লাখ টাকা এসেছে ঢাকায়। আর এই টাকা বাংলাদেশের অপর দুজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সংগ্রহ করে জঙ্গিরা।
অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭ রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্র দেশে আনা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। এপার-ওপারের এই অস্ত্রগুলো নিয়ে আসে দুইজন। তাদের দুইজনের নামই মিজান। অস্ত্র ছাড়াও গ্রেনেড তৈরির বিপুলসংখ্যক ডেটোনেটর আনা হয় একই পথে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে দেশে ঢুকেছে অন্তত ১০ কোটি টাকার ডেটোনেটর। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, নব্য জেএমবির অনেকে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। আবার গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন,‘বিভিন্ন অভিযানে নব্য জেএমবির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষমতা ক্ষয় হয়েছে। তবে এখনো এই জঙ্গি সংগঠনের কমান্ডিং পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বাইরে রয়েছে। অর্থ জোগানদাতা ও অস্ত্র দেশে নিয়ে আসার রুটও চিহ্নিত করা হয়েছে। কারা অস্ত্র এনেছে এবং কারা অস্ত্র গ্রহণ করেছে, তার সবই এখন স্পষ্ট।
সিটিটিসি ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনা তদন্তে পাকিস্তান ও ভারতের আরও দুই ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। সূত্র জানায়, দুবাই থেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় দুই নাগরিক প্রথম দফায় ২০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১৮ লাখ এবং তৃতীয় দফায় ১০ লাখ টাকা হুন্ডিতে দেশে পাঠায়। বাংলাদেশি দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই টাকা গ্রহণ করে বাশারুজ্জামান এবং রাজীব গান্ধী। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি সদস্যদের বিদেশে প্রশিক্ষণ হয় মাসের পর মাস। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সিরিয়াসহ নানা দেশে যাচ্ছে-আসছে তারা। হামলায় ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। শূন্য হাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণ জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র ও অর্থ। জঙ্গি অর্থায়ন করছে এমন বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে শোলাকিয়া ও গুলশান হামলায় জড়িত তিনজনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্র আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে। মূলত তামিম চৌধুরী এই অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করে ভারত থেকে। দুর্ধর্ষ জঙ্গি বোমা মিজান অস্ত্রগুলো নিয়ে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই অস্ত্রগুলো গ্রহণ করে জঙ্গি সদস্য ছোট মিজান। একই সীমান্ত পথে দেশে নিয়ে আসা হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের ডেটোনেটর। জঙ্গি দমনে কাজ করছেন গোয়েন্দা পুলিশের এমন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম সারির আত্মঘাতীদের এখনো নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। নুরুল ইসলাম মারজান ছাড়াও এমন ১৫ জনকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা যে কোনো ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। দেশ-বিদেশে এদের প্রশিক্ষণ রয়েছে। এরা হলেন- মো. বাশারুজ্জামান ওরফে বাশার চকলেট, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, রিপন, মানিক, বাদল, আজাদুল কবিরাজ, খালেদ, ইয়াসিন তালুকদার, গালিব, ইকবাল এবং সালাউদ্দিন। এদের মধ্যে মো. নুরুল ইসলাম মারজান, মো. বাশারুজ্জামান ওরফে বাশার চকলেট, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, রিপন ও খালিদ অন্যতম। রিপন এবং খালেদ শোলাকিয়া হামলার পর ভারতে পালিয়ে গেলেও সেখানে তারা গ্রেফতার হয়।
সূত্র জানায়, নিউ জেএমবির সদস্যরা কয়েক স্তরে বিভক্ত। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এরা প্রত্যকেই আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। দ্বিতীয় স্তরের আত্মঘাতী সদস্যদের মধ্যে ইতোমধ্যে ২০ জন নিহত হয়েছে। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম