সার্চ কমিটি নিয়ে এখনই কিছু বলবো না: আইনমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। এর আগেই নিয়োগ করতে হবে নতুন কমিশনারদের। তারা দায়িত্ব নিবেন ৮ ফেব্রুয়ারি। নতুন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য সরকার সার্চ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। এই সার্চ কমিটি যারা নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন মনে করবেন তাদের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর পর রাষ্ট্রপতি তার মতামত দিবেন এবং কমিশনার নিয়োগ করবেন। সার্চ কমিটি গঠন ও কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিএনপি যাতে বিতর্ক তৈরি করতে না পারে ও যে সব ব্যক্তিকে সার্চ কমিটির সুপারিশে কমিশনার নিয়োগ করা হবে তাদের নিয়ে বিতর্ক তুলতে না পারে এই জন্য সরকার সতর্কতা অবলম্বন করছে। সরকারের কাছে খবর রয়েছে, বিএনপি সার্চ কমিটি গঠন ও কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে নভেম্বর-জানুয়ারিতে রাজনৈতিক কর্মসূচির ডাক দিতে পারে। সরকার আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আরও একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা চালাতে পারে। সরকার বিএনপিকে এমন কোনো সুযোগ দিতে চাইছে না। এই জন্য সার্চ কমিটি গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও কথা বলবেন।
বিএনপির অভিযোগ, সরকার পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে চাইছে। তাদের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য আবারও পুতুল কমিশন গঠন করতে চাইছে। তাদের দাবি আগামী কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিতে নিরেপক্ষ ব্যক্তিদের সদস্য করতে হবে। সরকারের অনুগত, দলীয় সমর্থিত ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি করলে কমিশনারও নিয়োগ হবেন দলীয় সমর্থিত। সেটা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। বিএনপি এটা মানবে না। এই কারণে তারা আরও দাবি জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও নিদর্লীয় ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে। সার্চ কমিটি গঠনে সরকার জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই ব্যাপারে সম্প্রতি বিএনপি অবস্থান স্পষ্ট করার পর সরকার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে।
সূত্র জানায়, সরকার কমিশনার নিয়োগের জন্য নতুন কোনো পদ্ধতি করতে চাইছে না, তবে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি করতে চাইছে যাতে করে বিএনপি আপত্তি তুলতে না পারে। জনগণের কাছে যাতে মনে হয় সরকার নিরপেক্ষ কমিটি দিয়ে কমিশন গঠন করতে চাইছেন। এই ব্যাপারে কাজ করছেন সংসদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি এই ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে নারাজ।
আইনমন্ত্রীর কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এই ব্যাপারে কোনো কিছু বলবো না। তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমিটি কবে নাগাদ গঠন করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিগগিরই করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়নের কথা ছিলো। সেই আইন কি এরমধ্যে প্রবর্তন করা হবে নাকি সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশনার নিযুক্ত করা হবে এই ব্যাপারে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশনার নিয়োগ করা হবে। বিএনপি নিরপক্ষে কমিটি ও কমিশন না হলে মেনে নিবে না সেই ক্ষেত্রে করণীয় ঠিক করেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, তারা সব কিছু নিয়ে রাজনীতি করলে হবে না। সমালোচনা ও বিতর্ক তারা চাইলেই করতে পারে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠনে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এখনও পর্যন্ত নতুন কমিশনার নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। সরকার এটা করবে। তবে সরকার চাইলে বর্তমান কমিশনে যে চারজন কমিশনার আছেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাখতে রাখেন। তবে যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাকে নতুন করে কমিশনে রাখার কোনো সুযোগ নেই। পুরাতন তিনজন কমিশনারের মধ্যে সরকার চাইলে একজনকে রাখতে পারবেন। সেই রকম কোনো সিদ্ধান্ত নিলে ওই কমিশনারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দিতে হবে। এর বাইরে আরও তিনজনকে নিয়োগ করতে হবে। এই ব্যাপারে সার্চ কমিটির সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি তাদেরকে নিয়োগ করবেন। এই ধরণের আলোচনা চলছে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, হতে পারে।
একজন নির্বাচন কমিশনারের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার চাইলে তিনজন কমিশনারের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করতে পারেন। তবে আমি ওই পদে যেতে রাজি নই। আমি এখন থেকেই ব্রিফকেস গুছিয়ে রেখেছি। চলে যাওয়ার দিন গুনছি।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে কোনো ধরনের সমালোচনা হোক তা আমরা চাইছি না। এই জন্য চেষ্টা করা হবে এমন কমিটি করার যাতে করে বিএনপি এই জন্য কোনো ইস্যু তৈরি করতে না পারে। তিনি বলেন, বিএনপি চেষ্টা করবে শুরু থেকেই সার্চ কমিটি ও কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি করতে। তারা আগে থেকেই বলে আসছে আগামী নির্বাচন বর্তমান বিধানে করা হলে নিরপেক্ষ হবে না। কিন্তু বর্তমান বিধানেই যে নিরপক্ষে ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তা করা হবে।
সার্চ কমিটি গঠনে সরকার সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিবে কিনা জানতে চাইলে ওই সূত্র জানায়, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এমনভাবে কমিশন গঠন করা হবে যাতে সার্চ কমিটির কোনো সদস্যকে নিয়ে বিএনপি কোনো ধরনের সমালোচনা করতে না পারে।