সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে শ্বাসরোধে হত্যা : চিকিৎসক
সুজন কৈরী: রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএস (ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং এস্টেট) এর একটি বাসায় অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওয়াজি আহমেদ চৌধুরীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল খায়ের মোহাম্মদ শফিউজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ওয়াজি উদ্দিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।
গত বুধবার মহাখালী ডিওএইচএস এর ৪ নম্বর সড়কের ১৪৮ নম্বরের নিজ বাসায় এ হত্যাকা- সংঘটিত হয় বলে পরিবার ও স্বজনদের ধারণা। লাশটি উদ্ধার করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গত দুই মাস আগে নিহতের বাসায় তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকার আব্দুল আহাদ(৩০) চুরি করার জন্য তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা রেশাদ আহমেদ চৌধুরী কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আহাদসহ কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
রেশাদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, তার চাচা ওয়াজি উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (৭৬) মহাখালীর ডিওএইচএস-এর চার নম্বর রোডের ১৪৮ নম্বর বাড়ির ৫ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন। গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে তার চাচাকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে হত্যার পর কক্ষের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়। বিষয়টি তারা ওইদিন দুপুরের দিকে জানতে পারেন।
রেশাদ চৌধুরী বলেন, ওয়াজি আহমেদ চৌধুরীর ছেলে ফুয়াদ চৌধুরী অসুস্থ থাকায় ওই সময়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার কক্ষের বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখতে পান। ভেতর থেকে লাথি মেরে দরজা ভাঙ্গতে চেয়েও পারেননি তিনি। এ সময় দরজার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখতে পান ডাইনিং রুমের টিভি দেয়ালে নেই। পরে বেলকনি দিয়ে নেমে দেখেন তাদের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের মেইন গেটেও তালা। সন্দেহ হওয়ায় তিনি বিষয়টি পিয়ন সন্তোষ মারমা ও সিকে মারমাসহ অন্যদের জানান। পরে তালা ভেঙে দেখেন তার বাবার কক্ষেরও বাইরে থেকে তালা দেয়া। বাবার কক্ষের দরজা ভেঙ্গে দেখেন ওয়াজি আহমেদের হাত-পা বাঁধা নিথর দেহ পড়ে আছে। আর বাসার একটি ল্যাপটপ, একটি মোইল ফোন (নম্বর-০১৯১৮১১৪৬৫৪) ও ৪০ ইঞ্চি একটি টিভি নেই। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যান তারা। ঘটনার পর থেকে বাড়ির কাজের ছেলে আব্দুল আহাদ পলাতক। তাদের ধারণা, আহাদই তার সহযোগীদের নিয়ে তার চাচাকে হত্যার পর ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়েছে।
ওয়াজি আহমেদের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরী জানান, ওয়াজি আহমেদ চৌধুরী ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পদে থাকা অবস্থায় অবসরে যান। সিলেটের গোলাপগঞ্জে তার গ্রামের বাড়ি। ওয়াজি আহমেদের স্ত্রী আতিয়া চৌধুরী প্রায় ৬ বছর আগে মারা গেছেন। তাদের বড় ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী (৪৪) প্রায় এক দশক ধরে আমেরিকায় থাকেন। ছোট ছেলে ফুয়াদ আহমেদ চৌধুরী (৪০) মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায় বাবার সঙ্গে থাকতেন। ওয়াজি আহমেদের ছোট ভাই এজাজ আহমেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরে যান। তিনি বলেন, আহাদের দেশের বাড়িও সিলেট। এলাকার পরিচিত এক লোক তাকে ভাইয়ের বাসায় কাজে দিয়েছিল। ওয়াজি আহমেদকে সিলেটে গ্রামের বাড়িতে দাফন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি মাসুদ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। সম্পাদনা : রিকু আমির