বাংলাদেশের অধিকাংশ পুরুষই কী নারী নির্যাতনকারী?
হুমায়ুন আইয়ুব
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো নারীদের উপর এক জরিপ চালানোর পর বলছে, বিবাহিত নারীদের মধ্যে শতকরা ৭২.৬ জনই জীবদ্দশায় কখনো না কখনো স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জরিপে বলা হয়, এতে দেখা যায়, বিবাহিত নারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শারীরিকভাবে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হন।
জরিপের বিষয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই! প্রশ্নটা হলো মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশের ধর্ম-কর্মকারী পুরুষের চিত্র কি আসলেই এমন? পুরুষের নীতি, নৈতিকতা-আদর্শ কি এতটাই তলানিতে? কেন আমাদের এই নৈতিক অধ:পতন। ইসলাম তো নারীকে ফুলের সঙ্গে উপমা দেয়। নারীরা ফুল। নারীরা স্বপ্ন। আমরা পুরুষরাই নিজেদের আদর্শিক করে তৈরি করতে পারিনি। যে পুরুষের মাঝে আল্লাহর ভয় আছে; আছে উত্তম চরিত্র এবং চোখ-জিহ্বার সংযম সেই আদর্শ পুরুষ। বিনয় ও লজ্জার গুণ পুরুষের জীবনের অলঙ্কার। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর হক আদায়কারী মানুষটিও মহান। স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণকারী পুরুষ জান্নাতি! আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন কর। (সুরা নিসা : ১৯)।
মহানবী (সা.) বলেছেন, সমগ্র পৃথিবীই সম্পদ। আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে সতী-সাধবী নারী। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৩)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেন, আদর্শ মানুষ ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার যার চরিত্র সুন্দর এবং সে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। (তিরমিজি, রিয়াযুস সালেহিন হা/২৭৮)।
মহানবী (সা.) উত্তম চরিত্র বিষয়ে আল্লাহর কাছে বলতেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট হেদায়েত, আল্লাহর ভয়, সচ্চরিত্র ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি। (মুসলিম : ৪৮৯৮)। হযরত আবু সুফিয়ান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রোম বাদশা হিরাক্লিয়াস তাকে নবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মদ তোমাদেরকে কি করার আদেশ দেন? আমি বললাম নবীজি বলেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। তোমাদের পূর্বপুরুষ যা বলতেন তোমরা তা ছেড়ে দাও। আর আমাদেরকে নামাজ, সততা ও সচ্চরিত্র ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ করেন। নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্রের নির্দেশে পবিত্র কুরআন বলছে, হে নবী আপনি মুমিন পুরুষদের বলেন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু করে রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গ হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্যে পবিত্র পন্থা। নিশ্চয়ই আল্লহ তায়ালা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। (সুরা নূর : ৩০)। মহানবী (সা.) বলেন, চোখের ব্যভিচার হলো অন্যায় দৃষ্টিপাত। আদর্শ পুরুষের প্রধানতম চরিত্র হলো, অন্তরে আল্লাহর ভয়। কুরআনুল কারিমের ঘোষণা হলো, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যতটা ভয় তাকে করা উচিৎ। আর তোমরা খাঁটি মুসলিম না হয়ে মৃতুবরণ করো না। (সুরা আল ইমরান: ১০২)।
আদর্শ পুরুষের অন্যতম গুণ বিনয় ও লজ্জা। এ বিষয়ে হযরত ইবনু ওমর (রা.) সূত্রে, মহানবী (সা.) বলেন, লজ্জা ও ঈমান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং এর একটি তুলে নেয়া হলে অপরটিও তুলে নেয়া হয়। (বায়হাকি, মিশকাত হা/৫০৯৩)।
আবু উমামা (রা.) নবীজি (সা.) বলেন, ‘লজ্জা ও অল্প কথা বলা ঈমানের দু’টি শাখা। আর অশ্লীলতা ও বাকপটুতা মুনাফিকের শাখা। (তিরমিজি হা/২০২৭; মিশকাত হা/৪৭৯৬)।
মুসলিম শরিফে ইয়ায (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাদের বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমার কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন, যাতে তোমরা বিনয়ী হও। একে অন্যের ওপর গর্ব করবে না এবং রাগও করবে না।
মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার জন্য যে যত বেশি নিচু হবে, নিজেকে বিনয়ী করে রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তত বেশি উঁচু করবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের নৈতিক ও চরিত্রবান, বিনয় ও লজ্জাশীল আদর্শ পুরুষ হওয়ার তাওফিক দান করুন। সমাজের মানচিত্র থেকে বিদায় হোক নির্যাতনকারী পুরুষের সংখ্যা। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম