
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও অনিয়ম বাড়ছে ১৩ ব্যাংক ৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ
জাফর আহমদ: বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও আর্থিক অবস্থার অবনতি, অনিয়ম, অবৈধ অর্থায়ন ও পর্ষদে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়েছে। এ কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ফার্স্ট ফাইনান্স লিমিটেডে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হল। এর আগে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে।
ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক কোম্পানি আইনের যথাযথ প্রতিপালন না করা, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া ও পরিচালকদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল বেড়ে যাওয়ার কারণে এর আগে ১৩টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলো হলোÑ সরকারি খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাংলাদেশ এরপর পৃষ্ঠা ২, কলাম
(প্রথম পৃষ্ঠার পর)
ব্যাংকের দায়িত্ব হলো আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা করা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঋণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেন ঠিকমতো চলে এজন্য ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক সূচক ‘ক্যামেলস রেটিং’ ৩ বা এর বেশি হলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেই অনুযায়ী সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর্থিক খাতের অনিয়মের ভার বহন করতে হচ্ছে ঋণ গ্রাহকদের। উদ্যোক্তাদের মাত্রাতিরিক্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এ তথ্যে উঠে আসে। বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে বলা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।
ব্যাংকিং খাতে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। রাইট-আপ আছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে পুনর্গঠনের নামে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সব মিলে প্রায় এক লাখ হাজার কোটি টাকা মন্দ ঋণের বোঝা বহন করতে হচ্ছে ব্যাংকিং খাতকে। এর ৪৮ শতাংশ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব ৬ ব্যাংকে। অথচ মোট ঋণের ২৫ ভাগ ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর। এ কারণে সকল রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ওপর পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
এদিকে পরিচালকদের অন্তদ্বন্দ্ব, অর্থায়নের অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বশেষ গত সপ্তাহে ফার্স্ট ফাইনান্স লিমিটেডে পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার লিজিংয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা অনিয়ম ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ সূত্র জানায়, ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যারা আমানত সংগ্রহ হারের চেয়ে কম সুদে ঋণ দেয়। মূলত নিজেদের মধ্যে ঋণ বিতরণের জন্যই এই অনিয়ম। ২১ শতাংশের বেশি সুদেও কিছু প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণ করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় নেই। অথচ এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের বড় অংশ চড়া সুদ দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে।
পর্যবেক্ষক নিয়োগের ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কি কোনো পরিবর্তন হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে শুভঙ্কর সাহা বলেন, রাতারাতি উন্নয়ন সম্ভব নয়। ওই সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। কোনো অনিয়ম হলে সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেন। তবে আগে একেবারে পর্যবেক্ষক না দেওয়ার চেয়ে এখন ভাল হচ্ছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী
