
পতনের পথে আইএস, হারিয়েছে যোদ্ধা ও তহবিল
নূসরাত জাহান: রাশিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক ও মার্কিন বাহিনীর হামলার মুখে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাম্রাজ্য ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। হামলায় আইএস তাদের দখলকৃত এলাকা থেকে পিছু হটছে। হারাচ্ছে যোদ্ধা এবং তহবিল।
চলতি বছরের ১৩ আগস্ট সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় মানবিজ শহর আইএসের দখলমুক্ত হয়। আইএসের শেষ যোদ্ধা শহর ছাড়ার পরই মানবিজের সব পুরুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে এবং দাঁড়ি কাটতে শুরু করে। নারীরা পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। আর বয়স্ক নারীদেরও দেখা যায় ধূমপান করে উদযাপন করতে। আইএসের দখলদারিত্বের আমলে যা কল্পনাও করা যেত না। মানবিজ ছাড়াও আইএস কোবান, আল-কারইয়াতানি, তিকরিত ও ফাল্লুজার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইএসের দখলে তাহলে কতখানি এলাকা আছে? এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনফরমেশন হ্যান্ডলিং সার্ভিসের (আইএইচএস) বিশ্লেষক ফারাস আবি আলি জানিয়েছেন, ‘মরুভূমিসহ যদি আইএসের দখলকৃত এলাকা পরিমাপ করা হয় তাহলে তারা প্রায় অর্ধেকই হারিয়েছে।’ এ পর্যন্ত তারা যেসব এলাকা হারিয়েছে তা কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মানবিজ, তুরস্কের সীমান্তবর্তী এলাকা। এর অর্থ দাঁড়ায় বিদেশি যোদ্ধা, অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আসার পথ রুদ্ধ হলো। এলাকা হারানো মানে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
এ প্রসঙ্গে ফারাস আলি বলেন, ‘যখন কোনো এলাকা এবং সেখানকার মানুষ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় তখন সেখানকার আর্থিক সুবিধাদিও তাদের দখলে চলে যায়। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারালে অর্থের যোগান কমে যায়।’ তার মতে, আইএস খুব শিগগিরই তাদের অর্থের যোগানের এক-তৃতীয়াংশ হারাবে এবং ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ তাদের পরাজিত করা সম্ভব হবে।
তারপরও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আইএস কি আবারও কিছু এলাকা পুনর্দখল করতে পারবে? এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসির তাহরির ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক হাসান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আইএস একটু চিন্তিত। ২০১৪ সালে লোকজন যে আদর্শিক জায়গা থেকে আইএসে যোগ দিয়েছিল সে জায়গা এখন আর নেই তাদের। তাদের তথাকথিত খিলাফত এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরাক ও সিরিয়ার অনেকেই প্রথমদিকে আইএসকে বুঝে উঠতে পারেনি। না বুঝেই অনেকে তাদের সমর্থন করেছে এবং অর্থ দিয়েছে। এখন তারা বুঝতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে আইএস সম্পর্কে মানুষ যেভাবে কথা বলতো এখন আর তা বলে না।’
আইএসের এলাকা কমে যাওয়ায় হামলার সংখ্যাও কমেছে। ২০১৪ সালে তারা প্রতিমাসে দেড়শ থেকে ২০০ হামলা চালাত। ২০১৬ সালে কোনো মাসে তারা ৪০০ হামলাও চালিয়েছে। এখন তা অনেক কমে গেছে। দলটি এখন সদস্য সংকটে রযেছে। মানুষের কাছ থেকে তারা সেভাবে আর সাড়া পাচ্ছে না।
আল-কায়েদাসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আইএসের আদর্শিক জায়গা থেকে শুধু একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। তা হলো ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা। জিহাদিরা বহু বছর ধরেই এ খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এছাড়া আইএসের নৃশংসতাকে অনেক জিহাদি গোষ্ঠী পছন্দ করে না। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা জনপ্রিয়তা হারালো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক বছর আগে কেউ ভাবতে পারেনি এত দ্রুত ফুরিয়ে যাবে আইএস। তাদের কাজকর্মই এজন্য দায়ী। সূত্র: বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী
