দ্য কুইন্টের প্রতিবেদন বাংলাদেশে পাকিস্তানের মানধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুও তুলতে হবে ভারতকে
নূসরাত জাহান : জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তানি মদদের জবাবে ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেলুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন মোদি। আর কূটনীতিকরাতো বলেই যাচ্ছেন। তবে এ অভিযোগ আরও শক্তিশালী করতে ভারতীয় কূটনীতিকরা বাংলাদেশে পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুটিও সবার সামনে তুলতে পারে। বেলুচিস্তান ইস্যুতে কথা বলার সময় শুধু উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে না টেনে পাকিস্তানিরা কী কী করেছে তার বিস্তারিত বিবরণই দিতে পারে ভারত। ভারতের উচিত বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান দুই অবস্থাই তুলে ধরা। শুধু বেলুচিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরলে কাজ হবে না। তারা পূর্ব পাকিস্তানে কী করেছে সে বিষয়েটি তুলে ধরলেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আসল রূপ সবার সামনে প্রকাশ করা যাবে। বাংলাদেশি চিন্তাবিদ ড. এম এ হাসান এ পরামর্শ দিয়েছেন। ড. হাসান তার আইডিয়ার নাম দিয়েছেন ‘যুদ্ধ অপরাধ, গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ’। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেই অপরাধে অনেক দালিলিক প্রমাণ তার কাছে আছে। ওইসব প্রমাণের সঙ্গে বেলুচিস্তানের বর্তমান মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিষয়টি যুক্ত করে দিলেই পাকিস্তান কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে তার শক্ত প্রমাণ পাওয়া যাবে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী বেশকজন বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের পরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পাকিস্তান জাতিসংঘে তোলে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।
তাই বলে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সে বিষয়টি উপেক্ষা করলে চলবে না। ৯০ দিনে কাশ্মীরে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়।
কিন্তু কাশ্মীরিদের কাছে পাকিস্তানের আসল রূপ তুলে ধরতে হলে ১৯৭১ সালে তারা বাংলাদেশে যা করেছে তা তুলে ধরার বিকল্প নেই। কাশ্মীরিরা যে পাকিস্তানের সহায়তা নিচ্ছে তাদের জেনে রাখা ভালো সেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলেই ২১১ শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছিল। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর শুরতেই এই নৃশংস হত্যাকা- চালায় বর্বর পাকিস্তানিরা। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের হত্যাযজ্ঞে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। রোকেয়া হলে মেজর মোহাম্মেদ আসলাম অন্তত ৪০টি মেয়েকে বিবস্ত্র করে জনসমক্ষে ধর্ষণ করেছিল। এ বিষয়ে আরও ভালো বলতে পারবেন নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি ভাস্কর ফেরেদৌসি প্রিয়ভাষিণী। তিনি বলতে পারবেন ইসলামিক স্টেট নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নারীদের কীভাবে যৌনদাসী বানিয়ে রেখেছিল।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের জিহাদি দলগুলোকে অনেক দিন ধরেই পাকিস্তান পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কাজের অনেক প্রমাণও বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের কাছে আছে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানি এক নারী কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে।
দেশে এবং দেশের বাইরে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে মোদি কিংবা সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে আলাদা করতে পারবে না। তারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মদত দিয়ে যাচ্ছে। ২৬/১১ মুম্বাই বা পাঠানকোট কিংবা উরি হামলার পর তাদের কথা সমানে চলে আসে। এটা শুধু তাদের কাজের এক ঝলক মাত্র। শুধু করে বলাই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে নামতে হবে। তবেই হয়তো শায়েস্তা করা যাবে পাকিস্তানকে। সূত্র: দ্য কুইন্ট।-এফএ