‘স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ’ সুষ্ঠুভাবে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
রিকু আমির: গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নফাঁসের গুজব কিংবা পরীক্ষার আগেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রশ্নফাঁস চক্র গ্রেফতারের ঘটনা থাকলেও এবার পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষাকালীন ওই ধরনের কোনো ঘটনা ছাড়াই সারাদেশে সম্পন্ন হয়েছে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশের ১৮টি মেডিকেল কলেজের ৩৭টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজকে কেন্দ্র করা হয়েছে। এসব হচ্ছে- রংপুর মেডিকেল কলেজ ও কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এবং মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য গঠিত ওভারসাইট কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান শুক্রবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, এ পরীক্ষায় স্বচ্ছতার বিষয়টি আরও জোরালো করা হয়েছে। তবে বিগত ১৫-২০ বছরের মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যতো ধরনের অভিযোগ উঠেছে, কোনোটিই প্রমাণ হয়নি। মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা স্থান করে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা খুব স্বচ্ছতার সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবারের পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং যাতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, সেজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই প্রথমবারের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। পরীক্ষা তদারকির জন্য ১৪৩ সদস্যের সমন্বয়ে পৃথক তিনটি টিমও গঠন করেছে। এসব টিমের সদস্যরা কেন্দ্রে পরীক্ষা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকালে বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুলিশি পাহারায় ট্রাঙ্কে করে কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের মনোনীত প্রতিনিধি ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রশ্নপত্র ট্রাঙ্ক থেকে বের কর হয়। যদি পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ ট্রাঙ্ক খুলতো, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বেজে উঠত। এসব ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেসে প্রশ্ন ছাপানো হয়। প্রেসে কর্মরতদের প্রশ্ন ছাপানোর দিন থেকে পরীক্ষা গ্রহণ পর্যন্ত কর্মস্থল থেকে বের হতে দেয়া হয়নি, মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। এখানে কাজের জন্য এমন কর্মীদের বাছাই করা হয়েছিল, যারা লেখাপড়া জানেন না।
এদিকে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ৪/৫টি অভিযোগ এসেছে বলে জানা যায়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আরও কিছু জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। নাম না প্রকাশের শর্তে অধিদফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তি পাওয়া যায়নি। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানান। তবে পরীক্ষার যাবতীয় কাজ সম্পন্নে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) পূর্ণ ক্ষমতা না দেয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, সেটা আদর্শভিত্তিক মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নয়। মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত, মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন হবে এই পরীক্ষা? আইনত এই জায়গায় থাকার কথা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের। তারা নির্ধারণ করবে কে যোগ্য-অযোগ্য, কারণ তারা সনদ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে না। পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র কেমন হয়েছে, কী কী সমস্যা হয়েছে, এসব মূল্যায়নের দরকার আছে। এসব মন্ত্রণালয়কে দিয়ে সম্ভব নয়।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সুশীল সমাজকে অন্তর্ভুূক্ত করায় সমালোচনা করেন তিনি। রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, সিভিল সোসাইটি ভর্তি পরীক্ষায় কেন যুক্ত হবেন, এটা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন খান শুক্রবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রণালয়-অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি, সিনিয়র সাংবাদিকসহ সমাজের নানাস্তরের মানুষ যুক্ত ছিলেন এই ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে। ফলে কোনো অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২১টি রুমে ১০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশীদ বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, বিতরণ ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে শুধু মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা পরীক্ষার দিন হল পরিদর্শনে গেলেও এবার শিক্ষাবিদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজন সমন্বয়ে গঠিত ওভারসাইট কমিটির সদস্যরা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করায় অপ্রীতিকর কিছু হয়নি। ফল প্রকাশের দিনক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের কথা জানাতে পারেননি, শুধু বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে’। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম