পূর্ব ইউক্রেনে দাস-শ্রমিক
মোহসীন আব্বাস: পূর্ব ইউক্রেনে কর্মরত মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শ্রমশিবির আছে। তারা দাস-শ্রমিক। শ্রম দিতে বাধ্য। আর এসব শ্রমশিবির সোভিয়েত যুগের শ্রমশিবিরের কথা মনে করিয়ে দেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলের একটা এলাকাকে লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক বা এলপিআর বলে ঘোষণা করেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাটিতে এখন শ্রমশিবির পরিচালনা করছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। বন্দি আছে ৫ হাজার মানুষ। তাদের বিনে পয়সায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কাজ করতে না চাইলে অভুক্ত রাখা হয়, পেটানো হয়, নানাভাবে নির্যাতন করা হয় এবং নিঃসঙ্গ বন্দিত্বে রাখা হয়। ইস্টার্ন হিউম্যান রাইটস গ্রুপ রুশ ভাষায় এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। আলেকজান্ডার এফ্রেশিন সেই সব দাস-শ্রমিকদের একজন। ৫ বছর আগে বিয়্যার পান করতে বের হয়েছিলেন এক রাতে। একসময় তারা দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাস দেখতে পায়। মিনিবাসটির দরজা খোলা। তারা মিনিবাসে উঠে এর ইঞ্জিন সচল করে। কিছু দূর নিয়ে যায়। আলেকজান্ডারের এক বন্ধু লাইটারের জ্বালানি ঢালে মিনিবাসের সিটে। এর পর আগুন ধরিয়ে দেয়। আলেজান্ডারের বয়স তখন ২৪, ছিল মেয়ে বন্ধু। চলছিল সংসার পাতার পরিকল্পনা। দুই বন্ধু পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে সাড়ে আট বছরের কারাবাসের দ- হয় তাদের। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ডাকাতি ও অগ্নিসংযোগের।
ইউক্রেনের কারাগারগুলোয় যে কারখানা আছে, সেগুলোয় বন্দিরা কাজ করলে এক-তৃতীয়াংশ সাজা মওকুফ হয়। আলেকজান্ডার কাজ করতে রাজি হয়, আর ভাবে ছয় বছরের কম সময়ের মধ্যে মুক্ত হবে সে। কাজের বদলে সে সামান্য টাকা-পয়সাও পাবে। আর সে এই টাকা ব্যয় করত তার খাবারের মান উন্নত করতে।
এরপর, ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত শুরু হয়। আর আলেকজান্ডারের জীবন বদলে যায়, বদলে যায় এখানকার সব কিছু। ক্রাসনি লাচ কারাগার চলে যায় এলপিআর-এর নিয়ন্ত্রণে। আর এর পর এখানকার পরিস্থিতি বদলে যায়। শ্রমের বিনিময়ে আলেকজান্ডার যে সামান্য পয়সা পেত তা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়। আর যারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের উপর শুরু হয় নির্যাতন। আর খাবারের মান কমে যায় ব্যাপকভাবে। আর সবচেয়ে খারাপ খবর আসে যে, তাকে ২০১৯ সালের আগে মুক্তি দেওয়া হবে না।
এরপর থেকে আলেকজান্ডার ও তার কারা-সাথীদের প্রতিদিন এক জায়গায় জড়ো করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয় কাজের স্থানে। প্রতিদিন বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে হয় ১২ ঘণ্টা। আলেকজান্ডারের বয়স এখন ২৯ বছর। তার ভাবনা সে হয়তো আর বছরখানেক বাঁচবে। তাদের ওষুধ দেওয়া হয় না, ডাক্তার দেখানো হয় না। আলেকজান্ডারের বেশকিছু দাঁত পড়ে গেছে। প্রয়োজনে বেদনানাশক দেয়া হয় না। তাদের কেবল পরিজ (জাউ) খেতে দেওয়া হয়। কাজ করতে অস্বীকার করলে নির্যাতন সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইস্টার্ন হিউম্যান রাইটস গ্রুপ বলেছে আলেকজান্ডার ১৫টি বন্দি শিবিরে আটক শত শত নির্যাতিত মানুষের একজন প্রতিনিধি। এসব দাস-শ্রমিক আসবাবপত্র, কফিন, ক্যারাম বোর্ড, দাবার বোর্ড ও কাঁটাতার তৈরি করে। কেউ কেউ ময়দা তৈরি করে। কেউ কাজ করে ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা খনিতে। এই দাস-শ্রমিকদের কাজের মূল্য এক মিলিয়ন পাউন্ড। আর এ অর্থ ব্যবহৃত হয় এলপিআর নেতাদের জীবন যাপনে।
ইস্টার্ন হিউম্যান রাইটস গ্রুপের পরিচালক পাভেল লিসিয়ানস্কি বলেন, ইউরোপের বুকের ভেতর একুশ শতকে দাস-শ্রমিক আছে, এটা ভাবনাও বাইরে। তথ্যসূত্র বিবিসি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি